নীলক্ষেত মোড় অবরোধ : দাবিতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা

বিডিসংবাদ সংবাদদাতাঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রেখেছেন।

অবরোধের কারণে মিরপুর রোড, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেটের পাশের রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। মিরপুর রোডে ও আজিমপুর রোডে কয়েক শ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

কলেজটির বস্ত্র পরিষদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিরন সুলতানা সুমি নূর বলেন, অনেক দিন ধরেই তাঁরা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর আগেও একাধিকবার ইনস্টিটিউট করার দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইনস্টিটিউটের আওতায় আনতে হলে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। পরে গত ২১ সেপ্টেম্বর কলেজটিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।

নীলক্ষেত মোড় অবরোধ : দাবিতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরাতিনি বলেন, স্মারকলিপি দেওয়ার সময় তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। কো-এডুকেশন বা নারী-পুরুষ একত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আমাদের কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিস্টিটিউট হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ঘোষণা না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

আরেক শিক্ষার্থী মায়মুনা হায়দার চৌধুরী বলেন, ১৯৬১ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারিকুলাম নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য ইউনিট হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। চাকরির বাজারে যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের। এ জন্য স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট না হওয়াকে দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, লেদার টেকনোলজিকে যেভাবে ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। একইভাবে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকেও করা হোক।

এদিকে ঢাবির ইনস্টিটিউট করার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা সচিবকে প্রধান করে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি গত ছয় মাসেও প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে পারেনি বলে জানা গেছে। গত বছরের ৪ অক্টোবর ওই কমিটি গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত দু’টি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা শুনলেও আর কোনো অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে আর কোনো বৈঠকও ডাকা হয়নি। এ ব্যাপারে কমিটির প্রধান শিক্ষা সচিবের দফতর থেকে কোনো তৎপরতা না থাকায় অন্য সদস্যরাও কিছু বলতে রাজি নন। এমনই প্রেক্ষাপটে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আন্দালনে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানান ছাত্রীরা।

এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, উপাচার্য ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ৪ অক্টোবর নীলক্ষেত মোড়ে টানা ৯ ঘণ্টা অবরোধের পর শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষা সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। তবে ছয় মাস পরেও ওই কমিটি কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।

উল্লেখ্য, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা মৌলিক চাহিদা, স্বাস্থ্য, জীবন বিজ্ঞান, শিল্প, অর্থনীতি এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করে থাকেন। এখানে বর্তমানে পাঁচটি বিষয়ে চার বছর মেয়াদি বিএসসি (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সম্পদ ব্যবস্থাপনা, টেক্সটাইল, খাদ্য ও পুষ্টি, সৃজনশীল শিল্পকলা, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক।