নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে কানাডার আদালতে লড়বে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে তাঁর সরকার কানাডার আদালতে লড়বে।

এ বিষয়ে কানাডা প্রবাসী সকল বাংলাদেশীর সাহায্য ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে সরাসরি গুলী করে হত্যাকারী নূর চৌধুরী বর্তমানে গোপনে কানাডায় বসবাস করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের শাস্তি কার্যকর করতে চাই কেননা তারা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ।’
তিনি আজ রাতে আওয়ামী লীগ কানাডা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক অন্য খুনীদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। যাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং রশিদ ও ডালিম পাকিস্তানে বসবাস করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করায় এবং যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে শুরু করেছে।

মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার জানু, অন্টারিও প্রদেশ শাখা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম, ইরতাহাদ জুবেরী সেলিম, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মহমুদ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী শাসকেরা আমাদের দেশের গনতন্ত্রই কেবল ধ্বংস করেনি উপরন্তু সমগ্র অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেশের মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে তাঁর গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশী এবং দেশে তাদের স্বজনদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আগামীর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে দেশের উন্নয়নের গতি বজায় থাকে।
আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান তার তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং কারফিউ গণতন্ত্রের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রকে কলুষিত করেছিল।

বিএনপি গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই এবং এটি ছিল তাদের নিজস্ব দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তুু জনগণ কেন তাদের ভুলের খেসারত দেবে, কেন তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তারা জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করবে, প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের সনদ ঘোষণা করে তার বাস্তবায়ন শুরু করে, ২০১৪ সালে তাঁর দলের লক্ষ্য ছিল উন্নয়ন অব্যাহত রাখা। এখন তাঁর দল নতুন রূপকল্প নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নির্দিষ্ট কোন দল বা গোষ্ঠী নয় বরং সমগ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পল্লীর মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে। জনগণ উন্নয়নের এ সুফল ভোগ করছে।

তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য রয়েছে এবং অনেক আগে এই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহারের নিরিখে তাঁর সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড ও বার্ষিক বাজেট তৈরি হয়। যা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। এ জন্য আমরা এখন বলতে পরি যে, আমরা লক্ষ্যের চেয়েও বেশি করেছি এবং সব খাতে এর প্রতিফলন ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শিগগির দেশের সব এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আসবে। ২০০৮ সালের ১৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বিগত ৯ বছরে ১৮ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশব্যাপী ১শ’ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। শিল্পস্থাপনে প্রবাসীদের প্লট দেয়া হচ্ছে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৯ মাসে স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বেচে থাকলে দেশ ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে উন্নত হতো।

তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক খাতে ৯ বছরে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং পল্লীর জনগণ এর সুবিধা ভোগ করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান এখন সমুদ্র থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্ব সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখছে। ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণের জন্য জরীপ চলছে।

ধ্বংসাত্মক রাজনীতির জন্য বিএনপি’র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকান্ড কখনো চোখে দেখে না। কিন্তু তারা সব উন্নয়নের সুফল ভোগ করে। তারা এতিমদের নামে টাকা নেয়। কিন্তু এতিমরা এর কোন টাকা পায় না।

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজাকে আদালতের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে সরকারের করার কিছুই নেই- কারণ তার বিজ্ঞ আইনজীবীরা আদালতে তাদের মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র প্রতি তাঁর দলের কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই। তাঁর সরকার চাইলে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী বিএনপি’র নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অপতৎপরতার সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে পারতো।