নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে বানভাসিরা

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ  কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষ। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা মানুষদের কাছে এটাই যেন বাঁচার উপায়।
সাংবাদিকদের নৌকা দেখে একবুক পানি ভেঙ্গে ১০ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ত্রাণের আশায় ছুটে আসে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী সুবর্না বেগম (৩২)।

নৌকা দেখে কলার ভেলায় শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ছুটে আসা একই চরের আর এক বাসিন্দা নুর আলমের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৩০) জানান, প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দি তারা । বলেন, ‘তোমার গুলার নৌকা দেখি আইসলং, কোন সাহায্য টাহায্য দিবেন নাকি । আসি দেইখলং তোমরা কোন জিনিষ দিবার আইসেন নাই। ভুড়াতে (কলার ভেলা) আইজ ১০ দিন থাকি কষ্ট করবার নাগছি, বাচ্চা-কাচ্চার কষ্ট। খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট। এলাও কাইও কোন জিনিষ দেয় নাই।

শুধু সুবর্না বেগম ও হাজেরা বেগম নয়, এ অবস্থা এখন এ চরের আকলিমা, আনোয়ারা, মাজেদা, জেসমিন, রাশিদাসহ প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের। নৌকা চরের কাছে ভিড়তেই ত্রাণের আশায় পানি ভেঙ্গে ছুটে আসতে থাকে বানভাসিরা। পরে নৌকায় কোন সাহায্য নেই দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বন্যা দুর্গতারা অভিযোগ করেন এই চরে এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পৌছায় নাই।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ৪ হাজারেরও বেশি পরিবার প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দি । এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সাড়ে ৮শ পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১২টি চরের সবগুলোতে দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।

এ অবস্থা শুধু বালাডোবা চরেরই নয় ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সকল চর ও দ্বীপচরের। কোথাও কোথাও ত্রাণের ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবারের একটি প্যাকেট জুটলেও পরিবারে ৫ থেকে ১০ জন সদস্যের জন্য তা কিছুই না।

এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম সেতু পয়েণ্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বন্যায় ৪২টি ইউনিয়নের সাড়ে ৫শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অনন্ত ৮টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

আজ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসছেন ত্রাণ মন্ত্রী
বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন এবং দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দিতে আগামী আজ কুড়িগ্রাম আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রীর সফরসূচি সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে ত্রাণমন্ত্রী কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছবেন। ওই দিন সন্ধ্যায় মন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বৈঠক করবেন।
সোমবার সকালে মন্ত্রী জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করবেন এবং দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। ওইদিন বিকেলে কুড়িগ্রাম সফর শেষে লালমনিরহাটের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রীর।