পাহাড়ে ডামাঢোল বাজিয়ে বিতর্কিত আদিবাসী দিবস পালন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন উপলক্ষে বুধবার সকালে পৌর শহরে এক র‌্যালী বের করা হয়েছে। মহিলা কলেজ সড়কের পুরাতন রামগড় রাস্তার মোড় থেকে শুরু হওয়া র‌্যালীটি উদ্বোধন করেন ভারত প্রথ্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

আদিবাসী ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল যৌথভাবে এ র‌্যালীর আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন, আদিবাসী ফোরাম  জেলা শাখার সমন্বয়ক চাইথোয়াই মারমা, নারী নেত্রী নমিতা চাকমা ও প্রতিভা রোয়াজা। র‌্যালীটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে পূনরায় রামগড় রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বক্তারা পাহাড়ের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ নানা বিষয়ে তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

আদিবাসী শব্দটি নিয়ে শেষ নেই বিতর্কের। সরকারের তরফ থেকেও আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে জারী করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন। তারপরও পাহাড়জুড়ে বির্তকিত এ দিবসকে নিয়ে “আদিবাসী দিবস” নামে ডামাঢোল বাজিয়ে পালনে মেতে উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের একটি অংশ। পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি,রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে আলাদা আলাদা ভাবে দিবসটি পালন করে আসছে।

আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রচুর। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের মতে “বাংলাদেশে কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই”।

আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা একেবারেই অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয় যে তাদের উপজাতি বলা যাবে। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা জাতি। পাঁচটি মহাদেশে ৪০টির বেশি দেশে বসবাসরত প্রায় ৫,০০০ আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি। নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে এদের অনেকে প্রান্তিকাযয়িত, শোষিত, বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়েছে এবং যখন এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে তারা কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে।

জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৯৩ সালকে “আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ” ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত “আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক” ঘোষণা করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এছাড়াা ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে “বিশ্ব আদিবাসী দিবস” ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।

কিন্তু অন্যান্যদের মতে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি জাতিসত্তার উপস্থিতির হার তুলনামূলক বেশি। এত নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সমাহার থাকলেও এদের প্রত্যেকের জীবনধারা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি আলাদা। সংগত কারণেই আদিবাসীদের আচার-সংস্কৃতি নিয়ে সমতলের মানুষদের আগ্রহ। এ আগ্রহ দেখা যায় বিদেশি পর্যটকদের মাঝেও। ৪৫টি জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা নামে যে গবেষণাটি করে আলাদা তিন খন্ডে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্পদায়ের নাম উল্লেখ করা হয়। ৪৫টি বর্ণাঢ্য জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এ দেশকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা, সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ।