প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি- স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিডিসংবাদ প্রতিবেদকঃ  আজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, দৈনিক সমকাল এর কার্যালয়ে প্রজ্ঞা ও সমকালের যৌথ উদ্যোগে “স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্তকরণ: অগ্রগতি ও করণীয়” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে) ও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজ এর সহায়তায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে সম্মানিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি। এছাড়াও বৈঠকে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পীসহ তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকবৃন্দ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। দৈনিক সমকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।

অনুষ্ঠানের মাননীয় স্বাস্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, এর আগেও তামাক নিয়ন্ত্রণের কর্মকা-ে বিভিন্ন বাধা এসেছে, কিন্তু আমরা পিছুপা হইনি। এই নীতি দুটি প্রণয়নে সময় বেশি লাগলেও এগুলো অতি দ্রুতই পাস করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসলেই স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন ও অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মাননীয় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেবিনেট মিটিংয়ে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে আমার সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে।

এছাড়াও তিনি বলেন, এই সারচার্জের অর্থ তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্যই আদায় করা হয়, সুতরাং এই অর্থ তামাক নিয়ন্ত্রণের কাজেই ব্যবহার করা হবে। এডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পী এমপি তার বক্তব্যে নীতি দুটি অবিলম্বে পাস করার দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি শিরোনামে দুটি নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় যেগুলো বর্তমানে খসড়া অবস্থায় রয়েছে। তবে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে অদ্যবধি নীতিমালা দুটি চূড়ান্ত না হওয়ার এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এদেশের জনগণ।

এই প্রেক্ষাপটে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ জানান, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনের অংশ হিসেবে সরকার ইতোমধ্যে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজি এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গোল এর টার্গেট ৩-এ তথা এফসিটিসি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। সর্বশেষ ৩০-৩১ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামাককে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় একটি বাধা হিসেবে উল্লেখ করে আগামী ২০৪০ সালের পূর্বে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল অর্থাৎ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের অর্থ ব্যবহার করে দেশব্যাপী একটি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন।

এমতাবস্থায়, এই গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি দ্রুত পাস করার কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে এবং একই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবিলম্বে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ৪ কোটি ১৩ লক্ষ (গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে- এঅঞঝ, ২০০৯) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই হার প্রায় ৭ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ (ইনিস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন- ওঐগঊ, ২০১৩) মানুষ অকালমৃত্যু বরণ করে। তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয় (ডঐঙ, ২০০৪)।