বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা : রিজভী

বিডিসংবাদ ডেস্কঃ  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের লুটপাটের আরো বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আসলে ভোটারবিহীন সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগনের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।

একের পর এক জনবিরোধী কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি মেনে নেয়া হবে না বলে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আজ বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমার কথা। কিন্তু বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, যা নজিরবিহীন এবং গণবিরোধী।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি (ফার্নেস) তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে খরচ আরো কমবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের পিছনে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়স্বজন। তাদের লুটপাটের আরো বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন লুটের খাত। সরকার তার পছন্দের লোকদের দিয়ে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল প্রজেক্ট করিয়েছে। ওইসব প্রজেক্টে জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাতেও কূল পাচ্ছে না। এখন আবারো দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গরিবকে আরো গরিব বানাতে চাচ্ছে সরকার বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রিজভী বলেন, গত দেড় বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৮০ শতাংশের বেশি।

কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত কমানো হয়নি। এমনকি সরকার কমানোর কথা ভাবছেও না। ফলে দাম কমার সুবিধা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রতি লিটার অকটেনের উৎপাদন খরচ ৫০ টাকারও কম। সরকার বিক্রি করছে ৯৯ টাকা। পেট্রলের উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যেও ব্যবধান প্রায় একই রকম। সরকার দেশে ডিজেল বিক্রি করছে ৬৮ টাকা লিটার। অথচ ডিজেলের আমদানি মূল্য পড়ছে প্রতি লিটার ৪০ টাকার কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস তেল সরকার বিক্রি করছে প্রতি লিটার ৬২ টাকা। ক্রয়মূল্য বর্তমানে ২৫ টাকার মতো।

বিদ্যুতের সঙ্গে সব কিছু সম্পর্কিত উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেলে সবচেয়ে বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। শিল্প খাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। এমনিতে সরকারের লুটাপাট আর ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশে কোন বিনিয়োগ নেই। এমন সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। এতে গোটা  অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। আবার শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে দ্রব্যমূল্যও। নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এর মাশুলও দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। কৃষি খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে জনবিরোধী এ উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহবান জানান বিএনপির এই নেতা। রিজভী বলেন, এই পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসবের মাঝেও শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তাদের পেটোয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডব থামছেনা মন্তব্য করে রিজভী। এসময় বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটসহ সাধারণ মানুষের গুম এবং গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতৃবৃন্দ সোচ্চার ভুমিকা পালন করলেও, বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করলেও সরকার এখনো উদ্যোগি ভুমিকা নেয়নি বলেও অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সীমান্তে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখনো মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও তাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সরকার। তিনি বলেন, এক বিভৎস বর্বরতার নতুন নজির তৈরি করেছে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের নির্যাতন। যারা কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে প্রবেশ করছে তারা তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন। না খেয়ে ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। আহত, গুলিবিদ্ধ,ক্ষুধার্ত, অসুস্থ, বিবস্ত্র, ছায়াহীন তপ্তরোদ্রের মধ্যে চরম এক বিপর্যয়ের মধ্যে তারা দিনাতিপাত করছে।

এই মানবতাবিরোধী ভয়ংকর নির্দয়তার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বিবেকহীন নিরবতা বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্বতমান সরকারের কূটনৈতিক দূর্বলতা ফুটে উঠেছে।ফলে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিধানের জোর দাবি জানান রিজভী।