বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকার হোটেলে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় নিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত নভেম্বর মাসে এই ঘটনা ঘটে। গত সোমবার বিষয়টি নিয়ে বনানী থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত তরুণী। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঝিনাইদহের বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে প্রায় এক বছর আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রামগোপাল গ্রামের মাহমুদুল হাসান ওরফে জুয়েলের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১৬ নভেম্বর জুয়েল ঢাকায় আসেন। সেদিন তাঁরা দুজনে মিলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এর পরদিন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জুয়েল ওই তরুণীকে বনানী থানাধীন মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাঁরা হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া নেন।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, কক্ষে প্রবেশের পর জুয়েল ওই তরুণীকে জানান, কিছু সমস্যার কারণে সেদিন তাঁকে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন ওই তরুণী হোটেলের কক্ষ থেকে চলে আসতে চাইলে জুয়েল তাকে বাধা দেন এবং জোর করে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর তরুণী ঘুমিয়ে পড়লে জুয়েল তাঁর বেশ কিছু আপত্তিকর ছবি তোলেন। পরদিন সকাল ৯টার দিকে তাঁরা হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর জুয়েলকে বারবার বিয়ের কথা বললেও তিনি রাজি হননি। উল্টো ওই সব ছবি দেখিয়ে ভয় দেখান। ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করার হুমকি দিতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন ওই তরুণী।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোকন চৌধুরী বলেন, গত ৪০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে তাঁরা হোটেল পরিচালনা করছেন। কোনো ব্যক্তিকে হোটেলের কক্ষ ভাড়া দেওয়ার আগে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করেন তাঁরা। কেউ কক্ষ ভাড়া নিতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে কক্ষ ভাড়া নিতে চাইলে দুজনেরই জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হয়। ঘটনার দিনের রেজিস্টার খাতা দেখে খোকন চৌধুরী জানান, ওই তরুণীকে জুয়েল নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়েই কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। সে কারণে তাঁদের দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও তাঁরা জমা দিয়েছিলেন।

হোটেলের রেজিস্টারে দেখা যায়, ঘটনার দিন বিকেল ৪টার সময় দুই হাজার ২০০ টাকা দিয়ে ৪১০ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন জুয়েল ও ওই তরুণী। পরের দিন সকাল ৯টার দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে যান তাঁরা। খোকন চৌধুরী আরো জানান, ওই দুজন হোটেল ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁদের চোখে সন্দেহজনক কিছু পড়েনি। কেননা সন্দেহজনক কিছু মনে হলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানাতেন। সোমবার ওই তরুণীর মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত করতে এলে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরবরাহ করেছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে আবাসিক হোটেলটি ভাড়া নেওয়ার সময় জুয়েল তাঁর যে মুঠোফোন নম্বরটি দিয়েছিলেন সেটিতে ফোন করা হলে রবি নামের এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। তিনি জুয়েল নামের কাউকে চেনেন না বলেও দাবি করেন। ওই ঘটনা সম্পর্কে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে সোমবার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন জানান, ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর বনানী থানা এলাকায় অবস্থিত একটি হোটেলে ২৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়েছে। ভিকটিম নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার পর ওই নারীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান আবদুল মতিন।