মাটিরাঙ্গায় সেগুন গাছ কাটা নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

বন বিভাগের নাকের ডগায় অবৈধ কাঠ পাচারের নৈপথ্যে প্রভাবশালীরা

আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় রসুলপুর এলাকায় বন বিভাগের নাকের ডগায় অবৈধ ভাবে কোটি টাকার সেগুন গাছ কাটা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে খোদ বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। আর নৈপথ্যে কাজ করছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট চক্র। প্রায় দশ একর জায়গার উপর বড় বড় কোটি টাকার সেগুন গাছগুলো বন বিভাগের কোন ধরণের জোত পারমিট বা অনুমতির কাগজ ছাড়াই উদাও হয়ে গেলেও যেন দেখার কেউ নেই। আর অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র এই গাছ ক্রয়ের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, করিম ও আতিকের প্রায় দশ একর জায়গার উপর সেগুন বাগান উজাড় করছে সরোয়ার নামের এক অর্থ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সেখানে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই তৈরী করা হচ্ছে পল্টিফার্ম, কাটা হচ্ছে পাশ্ববর্তী পাহাড়ও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলার রসুলপুর এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-মাটিরাঙ্গা সড়ক থেকে আধা কিলোমিটার দুরে চলছে বিস্তিন্ন এ সেগুন বাগানের নিধনের কাজ। এই সড়কের একটু সামনে এগুলেই মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় হলেও সংশ্লিষ্টরা নাকি, কিছুই যানেনা। দাবী রেঞ্জ কর্মকর্তার। অভিযোগ আছে মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এই অবৈধ কাজ করা হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা ৯নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ: খালেক জানান, অবৈধ ভাবে প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি টাকার কাঠ বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করে অবৈধ ভাবে পাচারের জন্য নিয়ে গেলেও যেন দেখার কেউ নেই। বন বিভাগ নিস্ক্রীয় ভুমিকা পালন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন তিনি। রসুলপুর সমাজ কমিটির সভাপতি বাবুল হোসেনও একই অভিযোগ এনে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বন ও পরিবেশ কথা বিবেচনা করে বন আইনের দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান।

এ বিষয়ে সেগুন গাছ কাটাসহ অবৈধ কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত সরোয়ার এর সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননী।

সাংবাদিকদের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি নব নিযুক্ত মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-বিবিসন দাশ ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবিসন দাশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বন আইনে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মাটিরাঙ্গা নব নিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবিসন দাশ বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন বিষয়টি তিনি জানতেন না। সাংবাদিকদের কাছ থেকে যেনে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, কারো বাড়ীতে গিয়ে পাহারা দেওয়াতো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পরে তিনি বিষয়টি জানতেন না বলে জানালেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, বাগানের মালিক তার সেগুন গাছ কাটতে পারে,তবে পরিবহণ করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বন আইনে অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে।

পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের মূখে, অবৈধ ভাবে কাটা সেগুন গাছ কাজ জব্দ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা করা হবে বলে জানান। খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, যদি কেউ অবৈধ ভাবে গাছ কেটে নিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা জড়িতদের বন ও পরিবেশ আইনে মামলাসহ অবৈধ কাঠ জব্দ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান।