মানসম্মত চলচিত্র নির্মানে আহবান প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় ডেস্কঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরে উন্নত ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস প্রদান করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যারা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তারা আরো উন্নতমানের এমন সিনেমা করবেন, যা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সবকিছু যেন ধারণ করতে পারে এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের এই শিল্পটা যাতে আরো মর্যাদা অর্জন করতে পারে। বিশেষভাবে এসব দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে’।

গতকাল সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৩১ জন শিল্পী, কলা-কুশলীকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদান করা হয়।

১৯৮৬ সালে এফডিসি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার কথা স্মরণ করে সে সময়ে বিরোধী দলে থাকাবস্থাতেও এফডিসির সামনের সড়কটি চাপ প্রয়োগে তত্কালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে দিয়ে তৈরির প্রেক্ষাপটও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এ সময় চলচ্চিত্রের কলা-কুশলীদের দুঃসময়ে সহায়তার জন্য বিদ্যমান ট্রাস্ট ফান্ডটিকে আরো উন্নত করারও ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদান করেছেন। ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৩১ জন শিল্পী ও কলা-কুশলীর মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আফরোজা সুলতানা রত্না শাবানা এবং সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌসী রহমানকে। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন রিয়াজুল মাওলা রিজু পরিচালিত ‘বাপজানের বায়েস্কোপ’ ও মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘অনিল বাগচির একদিন’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চিত্রের পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের ‘একাত্তরের গণহত্যা ও বধ্যভূমি’। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন মো. রিয়াজুল মাওলা রিজু (বাপজানের বায়েস্কোপ) এবং মোরশেদুল ইসলাম (অনিল বাগচির একদিন)। প্রধান চরিত্রে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব খান (আরো ভালোবাসবো তোমায়) এবং মাহফুজ আহমেদ (অনিল বাগচির একদিন)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান (জিরো ডিগ্রি)। পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন গাজী রাকায়েত (অনিল বাগচির একদিন)। একই চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তমা মির্জা। খলনায়ক চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন ইরেশ যাকের (ছুঁয়ে দিল মন)। শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা যারা যারিব ও শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে প্রমিয়া রহমান (প্রার্থনা)।

এ ছাড়া আরো পুরস্কার পেয়েছেন- শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক সানী জুবায়ের (অনিল বাগচির একদিন), শ্রেষ্ঠ গায়ক শিল্পী সুবীর নন্দী (মহুয়া সুন্দরী) ও এস আই টুটুল (বাপজানের বায়েস্কোপ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা (মহিলা) প্রিয়াংকা গোপ (অনিল বাগচির একদিন), শ্রেষ্ঠ গীতিকার আমিরুল ইসলাম (বাপজানের বায়েস্কোপ), শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার মাসুম রেজা (বাপজানের বায়েস্কোপ), যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা ও মোঃ রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়েস্কোপ), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হুমায়ুন আহমেদ (অনিল বাগচির একদিন), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক মেহেদী রনি (বাপজানের বায়েস্কোপ), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক সামুরাই মারুফ (জিরো ডিগ্রি), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান (পদ্ম পাতার জল), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রতন কুমার পাল (জিরো ডিগ্রি), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা মুসকান সুমাইয়া ও শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান হিসেবে শফিক (জালালের গল্প)। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফেরদৌসি রহমানের পক্ষে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন তার ছেলের বউ সৈয়দা সাদিয়া আমিন এবং হুমায়ুন আহমেদের পক্ষে শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার গ্রহণ করেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ ও তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কাঁদলেন চিত্রনায়িকা শাবানা। নিজের অভিনয় জীবনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য দিতে এসে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা এ নায়িকা বললেন, ‘আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের।’