রায়পুরার বাঁশগাড়ীতে যুগযুগ ধরে চলছে মরণখেলা বন্দুক ও টেঁটাযুদ্ধ

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ  এলাকার আধিপত্যকে ধরে রাখতে বছরের পর বছর ধরে চলছে মরন খেলা বন্দুক ও টেঁটাযুদ্ধ। আধিপত্যের কাছে মানুষের জীবন মুল্যহীন। আর এটাকে জিয়িয়ে রাখতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্থানীয় কতিপয় অসৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ। প্রাণ ও সম্পদ হারাচ্ছে নিরীহ ও সাধারণ মানুষ।

রায়পুরা উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও শাহেদ সরকারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বন্দুক ও টেটা যুদ্ধ। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সিরাজুল হকের বিজয়ের পর বিজীত প্রার্থী সাহেদ সরকারের কর্মী সমর্থকরা সিরাজুল হকের কর্মী সমর্থকদের অত্যাচারে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। তারপর থেকে প্রায় ছোট বড় ১০/১২টি বন্দুক ও টেটা যুদ্ধ হয়। এতে দুই জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। গত ১৯ এপ্রিল সাহেদ সরকারের কর্মী সমর্থকরা এলাকায় উঠতে চেষ্টা করলে শুরু হয় বন্দুক ও টেটা যুদ্ধ। এই টেটা যুদ্ধে চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার গ্র“প এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দখলে আসে সাহেদ সরকার গ্র“প। এই যুদ্ধে আরো দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

গত ৮ মে সোমবার বেলা ১২ টার দিকে পূনরায় সিরাজুল হক গ্র“প আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকা দখলের চেষ্টা চালালে সাহেদ সরকার গ্র“প বাধার সৃষ্টি করে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে টেটা ও বন্ধুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজনগর গ্রামের জহর মিয়ার পুত্র জয়নাল মিয়া ও ছোবানপুর গ্রামের শুক্কুর আলীর ছুটিতে আসা প্রবাসী ছেলে আরশ আলী নিহত হয়। আগুনে পোড়ানো হয়েছে তিন শতাধিক বাড়ীঘর। ইতোমধ্যে এই দুই নেতার আধিপত্য ধরে রাখতে প্রাণ হারিয়েছে নিরীহ ছয় জন কর্মক্ষম ব্যক্তি। প্রায় সহশ্রাধিক মানুষ টেটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে কর্মঅক্ষম  হয়। এসকল পরিবারগুলো বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দুই শতাধিক বাড়ী পুড়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে সহশ্রাধিক বাড়ী। এসকল পরিবারগুলো এখন কোনভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

এলাকাবাসী জানান, যুগ যুগ ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক  প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় টেঁটা ও বন্দুক যুদ্ধ করে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে। গত ৩০ বছরে কমপক্ষে ৩০টি হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকেও পার পেয়ে গেছেন সিরাজুল হক চেয়ারম্যান। আর সে কারনেই তিনি এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। প্রশাসন তার ও সাহেদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করলেই রায়পুরার চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ীতে আর কোন বন্দুক ও টেঁটাযুদ্ধ হবেনা বলে মনে করেন এলাকাবাসী। এ বিএনপি নেতাকে কতিপয় অসৎ রাজনীতিক তার বিরুদ্ধে থাকা বেশ কয়েকটি মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া এবং নৌকা মার্কা প্রতীক দিয়ে চেয়ারম্যান বানানোর শর্তে তাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করায়। কথা অনুযায়ী কাজও হয়। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজী ও দলবাজীর মাধ্যমে আরো অশান্ত করে তোলে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাহারুল ইসলাম সরকার রায়পুরা থানায় যোগদানের পর থেকে সিরাজুল হক চেয়ারম্যান আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সে ওসি আজাহারুল কে টাকা দিয়ে এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছেন। আর ওসি আজাহার ও অধিক টাকা পাওয়ার লোভে শুধু বাঁশগাড়ী নয় পার্শ্ববর্তী নিলক্ষ্যায়ও দু’দলের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগিয়ে রেখেছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, প্রথমত চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার কারনে আমরা সময়মত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারিনা। দ্বিতীয়ত এসব এলাকার শিক্ষার হার অত্যন্ত নাজুক। চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষকে মোটিভেশন করে এই টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগযুগ ধরে চলতে থাকা মরন খেলা টেঁটাযুদ্ধ আদিম যুগের র্ববরতাকেও হার মানিয়ে দেয়। টেঁটাযুদ্ধ শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসন সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।

কিন্ত এই টেঁটাযুদ্ধ চিরতরে বন্ধ করতে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন না। মরনখেলা টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের আরো জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করছে শান্তিপ্রিয় চরাঞ্চলবাসী।