রায়পুরার বাঁশগাড়ীরচরে আ’লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে আবারো বন্দুকযুদ্ধ

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ীতে আবারো প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সৃষ্ট বন্দুক ও টেটাযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে জয়নাল (২২) ও আরশ আলী (২৫) নামে দুই লাঠিয়াল যুবক। আহত হয়েছে আল আমিন (৩৫), রুবেল (২৩) ও মান্নান (২৬)সহ কমবেশী ২৫ জন। আহত ৩ জনকে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সকালে বাঁশগাড়ীর বালুয়াকান্দী, বটতলীকান্দী, রাজনগর, দিঘলিয়াকান্দী, ছোবানপুরসহ ৭টি গ্রামে দীর্ঘ ১১ ঘন্টাব্যাপী বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এই প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। একই সময় ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে কমবেশী ২৫টি বাড়ীতে। গত ১৯ এপ্রিল দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত বন্ধুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে শারফিন ও মাসুদ নামে দুই ব্যক্তি নিহত ও অর্ধশত লোক আহত হবার পর ১৯ দিনের মাথায় এটা দ্বিতীয় বন্ধুক যুদ্ধ। এ নিয়ে বাঁশগাড়ীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্র“পের বন্দুক যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪ জন। গত ১৯ এপ্রিলের বন্ধুক যুদ্ধে নিহত ২ জন ছিল দুই আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থক। এবারের যুদ্ধে নিহত জয়নাল ও আরশ আলী দুইজনই আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত জয়নাল রাজনগর গ্রামের জহর মিয়ার পুত্র এবং আরশ আলী ছোবানপুর গ্রামের শুক্কুর আলীর পুত্র।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেদ সরকার ও তৎকালীন ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক’র মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে সাহেদ সরকার পরাজিত হবার পর তার লোকজন সিরাজুল হক ও তার সমর্থকদের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার পর সিরাজুল হক সরকারের সমর্থকরা তাদেরকে এলাকা থেকে হটিয়ে দেয়। যার ফলে সাহেদ সরকারের ২/৩শত সমর্থক দীর্ঘ প্রায় এক বছর যাবৎ এলাকা ছাড়া হয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকে। গত ১৮, ১৯ এপ্রিল সাহেদ সরকার ও তার সমর্থকরা পার্শ্ববর্তী নিলক্ষা, চরমধুয়া, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর এলাকা থেকে লাঠিয়াল বাহিনী ভাড়া করে নদী পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্পীডবোট ইত্যাদি জলযান নিয়ে শত শত লাঠিয়াল বন্দুক ও টেটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বন্দুক ও টেটা যুদ্ধে দুই জন নিহত হয়, আহত হয় অর্ধশত।

এই যুদ্ধে চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের দল এলাকাছাড়া হয়ে যায়। সাহেদ সরকারের লোকজন এলাকা দখলে নিয়ে ব্যাপক ভাংচুর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজী, বোমাবাজী করতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায়ই চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনী পূনরায় এলাকা দখলের জন্য গত রবিবার রাতে প্রথম আক্রমন চালিয়ে ব্যর্থ হয়। গতকাল সোমবার সকাল ১০ টায় তারা পূনরায় দ্বিতীয়বারের মত হামলা চালায়।  এতে সিরাজুল হকের বাহিনী প্রথম এলাকায় উঠতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে নিলক্ষা ও চরমধুয়া এলাকার ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী তাদেরকে পিছন দিক থেকে আক্রমন করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বন্দুক ও টেটা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উভয় পক্ষের লাঠিয়ালরা ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরন ঘটায়। দুই পক্ষের গুলাগুলি চলাকালে জয়নাল ও আরশ আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। আহত হয় অন্তত: ২৫ জন। এদের মধ্যে ৩ জনকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি রায়পুরায় আইন শৃংখলা কমিটির সভায় ছিলেন। তিনি বিস্তারিত জানতে পারেননি। তিনি শুনতে পেয়েছেন যে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সাহেদ সরকারের লোকজন তার নিজের ২টি বাড়ীসহ কমবেশী ২শত বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

বায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাহারুল ইসলাম সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তিনি জানান এলাকার শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।