রেলের পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম মৃধার বিরুদ্ধে ৭ মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
বহুল আলোচিত রেলের পূর্বাঞ্চলের বরখাস্তকৃত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে সাত মামলায় আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে অধিকতর তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুদকের দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রগুলো জমা দেন। রেলের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া এসব মামলার অভিযোগপত্র নগরীর কোতোয়ালী থানায়ও পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে এসব মামলায় মৃধাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ভূঁইয়া অভিযোগ পত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সাতটি মামলার মধ্যে কার্পেন্টার, সিনিয়র ডেটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর ও গুডস সহকারী পদে নিয়োগে অনিয়মের মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।

এছাড়া রেকর্ড কিপার, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস, শরীরচর্চা শিক্ষক ও রেলওয়ের আদালত পরিদর্শক পদে নিয়োগে অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ রাসেল।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা সাতটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে ও সংশ্লিষ্ঠ থানায় জমা দিয়েছি। অভিযোগপত্রে ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ওয়েলফেয়ার অফিসার গোলাম কিবরিয়াকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের আসামি করা হয়েছে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন পদে ১ হাজার ১১৭ জনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ২০১২ সালে মৃধার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ১৪টি মামলা করা হয়।

কিন্তু তদন্ত শেষে সাত মামলায় ইউসুফ আলী মৃধাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে দুদক। পূর্ব রেলের সহকারী লোকোমাস্টার পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে করা একটি মামলায় নিয়োগ পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নকারী তিন শিক্ষককে অভিযোগপত্রে আসামি করা হলে অব্যাহতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তারা।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৪ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দেয়া আদেশে মৃধাকে বাদ দিয়ে ওই মামলাটিতে অভিযোগপত্র ‘যথার্থ হয়নি’ উল্লেখ করে তাকে অন্তর্ভুক্ত করেই মামলা পরিচালনায় নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর অভিযোগ থেকে মৃধার বাদ পড়া সাত মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এরপর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি সাতটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুমোদন দেয় বলে জানান আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া।

উল্লেখ্য ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকায় বিজিবি হেডকোয়ার্টারে টাকার বস্তাসহ আটক হন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক। এই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
দুদক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তকালীন মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধারও সম্পৃক্ততা পায়। রেলের ১৩টি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৬৯ জন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের তথ্য পায় দুদক।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর কোতোয়ালী থানায় ইউসুফ আলী মৃধাসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ১৪টি দুর্নীতির মামলা করে দুদক।

২০১২ সাল থেকে দুই বছর পলাতক ছিলেন ইউসুফ আলী মৃধা। পরে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। বর্তমানে কারাগারেই রয়েছেন রেলের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা।