লাকীর দ্বিতীয় জানাজা পর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

সুরের বরপুত্র লাকী আখন্দের দ্বিতীয় জানাজ সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বাদ জোহর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে দাফন করা হয় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।

এর আগে সকাল ১০টায় রাজধানীর আরমানিটোলা মাঠে লাকী আখন্দের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে কিংবন্তি এই সঙ্গীতশিল্পীর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে তার প্রতি শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ।

এর আগে সকাল ৯টায় বারডেম হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ আরমানিটোলার নিজ বাস ভবনে নেয়া হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাসাতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবন্তি সঙ্গীতশিল্পী লাকী আখন্দ।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর।

২০১৫ সালে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে লাকী আখন্দের। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি ছিলেন তিনি।

গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) ছেড়ে আরমানিটোলায় নিজ বাসায় ফেরেন তিনি।

শিল্পীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডেও নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য তখন পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

থাইল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতাল ও বারডেমে চিকিৎসা নেন। পরে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় তাকে।

লাকী আখন্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। শৈশব পেরোতেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান রেকর্ড লেভেল প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ছন্দ-লয়ের টানে তিনি ভেসে চললেন সুরদরিয়ায়।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জি-সিরিজের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘লাকী আখন্দ হলেন সুরের বরপুত্র’। সে অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়।

লাকী আখন্দ ছিলেন একাধারে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার এবং গীতিকার। ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে বের হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘লাকী আখন্দ’। ওই অ্যালবামের বেশ কয়েকটি গান ব্যাপক সাড়া ফেলে।

ছোট ভাই হ্যাপি আখন্দকে নিয়ে সৃষ্টি করেন বিখ্যাত গান ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’। লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ ‘লিখতে পারি না কোনো গান, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।

১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপি আখন্দের মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান এই গুণী শিল্পী।

মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে লাকী আখন্দ ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে আবারও ফিরে আসেন শ্রোতাদের মাঝে।

কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কি করে বললে তুমি’, হাসানের ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা’র মতো কালজয়ী গানের সুরারোপ করেন তিনি।
‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া’ ব্যান্ডতারকা জেমসের এই বিখ্যাত গানটির সুরসংযোজনা ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন লাকী আখন্দ।