সরকার ছাগল ভেড়া মহিষ পালনকারীদেরও ঋণ সুবিধা দেবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার এখন থেকে ছাগল, ভেড়া এবং মহিষ লালন পালনকারিদেরকেও গবাদিপশু লালন পালনকারিদের ন্যায় পাঁচ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ সুবিধা প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করছে।

তিনি আজ তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গাভী পালনে আমরা যদি পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারি তাহলে ভেড়া, ছাগল,এবং মহিষ এগুলিতে দিতে পারবো না কেন? দিলে মানুষ আরো উৎসাহিত হবে।’

সকালে কটন ও জুট সিস্টেমে ভেড়ার পশম মিশিয়ে সুতা এবং সেই মিশ্রনে প্রস্তুতকৃত বস্ত্র সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা একথা বলেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘তবে শুধু উৎপাদন করলেইতো হবে না। সেগুলো যদি সাথে সাথে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা যদি না করে দেই তাহলে কিন্তু কোনটাই টিকবে না। স্থায়ী হবে না।’

তিনি বলেন, আমাদের কিন্তু গরু ও ছাগল কোরবানী দেয়ারই রেওয়াজটা আছে। এখনো ভেড়া কোরবানীর ব্যাপারে কোনো আগ্রহ কারো নেই, দেয়ও না।

তিনি বলেন, ‘এগুলো আস্তে আস্তে উৎসাহিত করা যায়’।

মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইসস্টিটিউট (বিএলআরআই) ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এর যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভেড়ার পশম, পাট ও সুতার মিশ্রনে কম্বল, শাল, পাপস, জায়নামাজসহ অন্যান্য গৃহস্থলী সামগ্রী তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হক, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হক এবং বিএলআরআই মহাপরিচালক তালুকদার নুরুন নাহার বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ছাগল, ভেড়া এবং মহিষ লালন পালনকারিদেরকে নিম্ন সুদে এই ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর সাথেও কথা বলবেন।

কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতিপালিত ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ এবং যা থেকে প্রতিবছর ৩৪০০ মেট্রিকটন উল উৎপাদন হয়। কিন্তু কারিগরি জ্ঞানের অভাবে এগুলোর যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবহার হচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধুর সময় সমবায়ের ভিত্তিতে মিল্ক ভিটা তৈরির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সমবায় ভিত্তিতে করলে তারা বাজারজাতকরণের সুবিধা পাবে।

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা কো-অপারেটিভের মাধ্যমে দিতে পারি তাহলে সেটার বাজারজাতকরণের সুবিধাটাও তারা পাবে। কাজেই আমি মনে করি ওভাবে আমাদের একটা উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। তাতে মানুষ আরো উৎসাহিত হবে।’

উল্লেখ্য, ভেড়ার মাংসে ছাগলের চেয়ে চর্বির পরিমান কম থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও কম। এছাড়া ছাগলের চেয়ে কষ্টসহিঞ্চু পরিবেশে বেড়ে উঠা ভেড়ার লোম ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেড়ার গোশতের চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশে এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। ভেড়ার চাষও তুলনামুলকভাবে কম।

পণ্য তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে এগুলো বাজারজাতকরণের নির্দেশ দেন। দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও পাঠানোর ওপড় গুরুত্বারোপ করেন।

ভেড়ার মত অন্যান্য গৃহপালিত পশুর গোশত ছাড়াও হাড় ও চামড়া থেকে বিভিন্ন পণ্য রফতানিরও আহ্বান জানান তিনি।

দেশে বর্তমানে ধান, মাছসহ বিভিন্ন ফসল ও খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে গবেষণার ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রায় ২১ বছর পর আমরা ১৯৯৬ এ ক্ষমতায় এসে গবেষণার ওপর গুরুত্ব না দিলে এগুলো কিন্তু হতো না। গবেষণাটার মাধ্যমে আমরা কিন্তু অনেক কাজ করতে পারি।’

ভেড়ার পশমের সাথে পাট মিলিয়ে পণ্য তৈরি করলে একদিকে পশম আমদানি যেমন কমবে আবার পাটেরও চাহিদা তৈরি হবে বলে তিনি জানান।

একইসাথে কালো ছাগল উৎপাদনসহ অন্যান্য দুগ্ধ ও প্রাণীজ আমিষ উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপের কারনে দেশ সবদিক দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেশের মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগত। মানুষ একবেলাও খাবার পেত না। এখন বাংলাদেশে তা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, তার সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধাগুলো যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হলে এদেশে আর কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না।

সূত্র: বাসস