সোনারগাঁওয়ে লোকজ ও কারুশিল্প মেলা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। দর্শনার্থীদের বহনকারী গাড়িতে ফাউন্ডেশনের প্রবেশের তিনটি পথেই যানজট সৃষ্টি হয়। ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্য দিনের তুলনায় টিকিট বিক্রি হয়েছে তিন গুণ বেশি। দোকানিদের বিক্রিও হয়েছে ভালো। গত ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু হয়।

মেলা চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, ফাউন্ডেশনের ফটকগুলোতে দর্শনার্থীদের চাপ। দর্শনার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করছে। তা ছাড়া মেলার প্রতিটি স্টলেই দর্শনার্থীর চাপ ছিল। দোকানিরা বলেছেন, অন্য দিনের তুলনায় মেলায় লোকসমাগম বেশি হয়েছে। মেলার প্রতিটি দোকানে ভিড় ছিল লক্ষ করার মতো। লোকসমাগম থাকার কারণে মেলায় বেচা বিক্রিও বেড়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সোনারগাঁওয়ের পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি, চট্টগ্রামের নকশি পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারু পণ্য, মেলায় ঝিনাইদহ ও মা-রার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা শিল্প, সোনারগাঁওয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সীগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পীরা তাদের নিজ হাতে তৈরি কারুপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় কর্মরত কারুশিল্পীর কারুপণ্য উৎপাদন প্রদর্শনীর ২২টি স্টলসহ ১৯৩টি স্টল রয়েছে।

নরসিংদী থেকে মেলায় বেড়াতে আসা সারোয়ার হোসেন ও আজাদ রহমান জানান, প্রতি বছরই ছেলেমেয়ে নিয়ে তারা মেলায় ঘুরতে আসেন। এবার ছুটির দিনে এসেছেন। অনেক ভিড় ঠেলে তাদের মেলায় প্রবেশ করতে হয়েছে। কসমেটিকস দোকানি আবু তৈয়ব জানান, গত এক সপ্তাহের পর মেলায় দর্শনার্থী বেশি হওয়ার কারণে বিক্রি বেশি হয়েছে। তবে প্রতিদিন যদি এমন দর্শনার্থীর আগমন ঘটে তাহলে সব খরচ তুলে তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। মেলায় এই প্রথমবারের মতো গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম ‘বাংলাদেশের গৌরব গাঁথা আমাদের এই নকশিকাঁথা’ শিরোনামে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিদিন লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সঙ্গীত, মাইজভান্ডারি গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গায়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তি-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক্কা খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।