স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে সংসার ছেড়ে এসেছিলাম নূর হোসেনের বান্ধবী নীলা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পরই আলোচনায় আসে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের এক সময়কার আলোচিত ও প্রভাবশালী বান্ধবী সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার নাম। একই সাথে মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে তার একাধিক স্ত্রীর নামও। অনেকের মনে প্রশ্ন এক সময়কার ক্ষমতাধর সেই তথাকথিত স্ত্রী ও বান্ধবীরা এখন কোথায়। বাংলাদেশে কয়েক নারীকে বিয়ে করার পাশাপাশি ভারতের কলকাতায় রাধা নামের এক নারীকেও বিয়ে করেছিলেন নূর হোসেন। এই বিয়ে ৬ বছরের মতো টিকেছিল বলে জানা গেছে।

তবে, নূর হোসেনের ফাঁসির দন্ডাদেশ ঘোষণার পর সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে নীলা ও এই সন্ত্রাসীকে ঘিরে নানা কাহিনী। কারণ নূরের কারণে একসময় বিপুল দাপট ছিল নীলার। তবে নীলা বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নূর হোসেন তাকে বিয়ে করেছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন বলে জানিয়েছেন এই সাবেক মহিলা কাউন্সিলর। তিনি খেদোক্তি করে বলেন, এই ভুল পথে পা বাড়ানোর কারণে আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। এখন আমি অসহায়। এলাকার সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার দাম্পত্য অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে তার স্ত্রীর অভিনয় করে গেছি দিনের পর দিন। কারণ আমি ছাড়াও নূরের আরও পাঁচজন স্ত্রী ছিল। এত স্ত্রীর ভিড়ে আমার কোনো গুরুত্ব ছিল না। আমাকে কোনো সম্পত্তি কিংবা অধিকার দেয়নি।

সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার পর নীলার অভিব্যক্তি জানতে দেশের গণমাধ্যম তত্পর হয়। নীলা তার অতীত কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আজ যারা গলাবাজি করছে তারা কি নূর হোসেনের কাছ থেকে অর্থবিত্ত ও সুযোগ সুবিধা নেয়নি? তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছে না কেন ?।
নারায়ণগঞ্জে কর্মরত এবং স্থানীয় পত্রিকাসহ অনেক মিডিয়ার সাংবাদিকরা নূর হোসেনের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। তারা এখন কোথায় ? অনেককেই আমি চিনি।

অন্য স্ত্রীদের কে কোথায় : নীলার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নূর হোসেনের সঙ্গে বহু নারীর সখ্যতা ছিল। বৃহস্পতিবার নীলার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, নূর হোসেন নারীলোভী ছিলেন। যাকে চোখে ধরেছে নানা ফন্দিফিকির করে তাকেই বিয়ে করেছে। তবে ওই তথাকথিত বিয়ে পর্যন্ত, স্ত্রীর অধিকার মিলত না। এছাড়া অসংখ্য বান্ধবী ছিল তার। নূর হোসেনের পাঁচ স্ত্রীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম স্ত্রী লিলির বাড়ি ঢাকার মিল ব্যারাক এলাকায়। তিনি এখন নূরের সংসারে নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী লিপির বাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে। তার গর্ভে বিপ্লব নামের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কলেজপড়ুয়া বিপ্লব নূর হোসেনের মদের দোকান থেকে মদ পান করতে করতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিল। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়।
তৃতীয় স্ত্রী পারুলের বাড়ি ডেমরার সারুলিয়ায়। তিনিও এখন নূরের সংসারে নেই। আর চতুর্থ স্ত্রী কাঁচপুরের রুমা। তার গর্ভের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। রুমার সঙ্গেই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে থাকতেন নূর হোসেন। এই স্ত্রীর নামে অনেক সম্পদ গড়ে তোলেন এই সন্ত্রাসী। নূর হোসেন গোপাল নাম নিয়ে ভারতে পালাতে গেলে থাকতেন পঞ্চম স্ত্রী রাধা কলকাতার সদর স্ট্রিটেরবাড়ি।

নীলা বলেছেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সাত খুনে যারা জড়িত, তাদের সবার সাজা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নূর হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।