হরিণাকুন্ডু পৌর মেয়রের অনিয়ম,দুর্নীতি ও কাউন্সিলরদের লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ  ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি,অবৈধভাবে কর্মচারী নিয়োগ ও পৌর কাউন্সিরদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেছে বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর এসোসিয়েশন ঝিনাইদহ জেলা শাখা। আজ সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের পোষ্ট মোড়ে এই মানববন্ধন কর্মসুচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতির আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মধু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হরিণাকুন্ডু পৌর সভার প্যানেল মেয়র খাইরুল ইসলাম,ঝিনাইদহ প্যানেল মেয়র ফারহানা রেজা আঞ্জু ও হরিণাকুন্ডু পৌর কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা শাখের আলী প্রমুখ।

বক্তারা অবিলম্বে পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুর অনিয়ম,দুর্নীতি ও পৌর কাউন্সিলদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি করেন। তা না হলে সারা বাংলাদেশ জুড়ে কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দেন। মানববন্ধন শেষে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ মন্ডলের হাতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

হরিণাকুন্ডু পৌর মেয়রের অনিয়ম,দুর্নীতি ও কাউন্সিলরদের লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানসুত্র জানায়, ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু পৌর মেয়র দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে কাউন্সিলবৃন্দের সাথে তার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারন করে। এ ঘটনায পৌরসভার প্যানেল মেয়র খায়রুল ইসলামসহ ১০ জন কাউন্সিলর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগটি বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেন। অভিযোগ রয়েছে, মেয়র ৭টি পদের জন্য অতি গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন।

মাসিক সভায় অনুমোদনের বিধান থাকলেও মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু তা করেন নি। এছাড়া নিয়োগের ছাড়পত্র আনতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া থাকা সত্বেও বেতন ভাতা পরিশোধের ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে স্থানীয় সরকার শাখায় পাঠানো হয়েছে। এমনকি প্রত্যয়ন প্রত্রে পৌর সচিবের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মনগড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অবৈধ ভাবে ৭টি পদে নিয়োগের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন মেয়র।

কাউন্সিলররা লিখিত অভিযোগে আরো জানান, পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু অবৈধ নসিমন আলমসাধু ইজিবাইক থেকে টোল আদায়ের ৪৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে পৌরসভায় জমা না দিয়ে নিজেই পকেটস্থ করছেন। পৌর রেজিষ্ট্রারে এন্ট্রি আছে। চাকুরী দেয়ার নাম করে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে জন প্রতি ৮/১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ পৌর সভার বর্তমান আয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এছাড়াও ধর্মীয় কাজের কথা বলে সপ্তাহে ৪ দিন ছুটি ভোগ করছেন এবং ১ দিন অফিস দেখিয়ে ৬-৭ হাজার টাকা টিএ/ডিএ নিচ্ছেন মেয়র রিন্টুু। ইতিপূর্বে মেয়র কয়েকটি পদে জাল ও ভুয়া সনদে চাকরী দিয়েছেন। যা নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মামলা চলমান আছে। ঠিকাদার কর্তৃক জমাকৃত হাট-বাজার ইজারার সিডি/ব্যাংক ড্রাফট পৌর তহবিলে জমা না দিয়ে মেয়র উত্তোলন করেছেন।

এছাড়া মাছ বাজার, পান বাজার, কসাই খানা ইজারা না দিয়ে খাস আদায় করে এবং সরকারি ভ্যাট-আয়করের টাকা জমা না দিয়ে সে টাকাও উত্তোলন করে মেয়র রিন্টু আত্বসাৎ করেছেন। নিয়ম নীতি না মেনে এডিপি/উন্নয়ন ফান্ডের টাকা দিয়ে এসি, রুমের পর্দা, ফার্নিচার ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া এডিপি/উন্নয়ন ফান্ডের টাকা টেন্ডার না দিয়ে ওই টাকা কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেছেন।

পৌর তহবিলের টাকা তছরুপ করার কারনে পৌর কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, ভাতা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এডিপির টাকা লুুটপাটের যেন মহৌৎসব চলছে হরিণাকুন্ডু পৌরসভায়। রোলার ড্রাইভারের পদ না থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ পৌরসভায় যোগদান করিয়েছেন। গার্ভেজ ট্রাক ভাড়ায় চালিয়ে মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু লাখ লাখ টাকা আত্বসাৎ করেছেন। ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা শাকের আলীকে মাসের পর মাস সম্মানী ভাতা বন্ধ রেখেছেন এবং ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শুভংকর বিশ্বাসকে সম্মানী ভাতা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়েছে।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিয়ম-দূর্নীতি করে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই আলোচিত মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু। কোন নিয়ম নীতির তিনি তোয়াক্কা করেন না। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সমস্থ অনিয়মই তার কাছে নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। পৌরসভার সচিব সন্তোষ কুমার হাজরা জানান, পৌরসভার নিয়োগের কোন ছাড়পত্র আনতে সচিবের প্রত্যয়ন লাগে। কিন্তু সচিবালয়ে যে প্রত্যয়ন জমা দিয়ে মেয়র সাহেব ৭টি নিয়োগের  ছাড়পত্র এনেছে সেখানে আমি কোন স্বাক্ষর করি নি। সম্পূর্ন অগোচরে তার (সচিবের) স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগের ছাড়পত্র আনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ সব বিষয়ে হরিণাকুন্ডু পৌর সভার মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টরু কাছে জানতে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। হরিণাকুন্ডু পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ স্থানীয় সরকারের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, দূর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ ও বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদের দুর্নীতির দ্বিতীয় পর্ব
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে উন্নয়নের নামে চলছে ব্যাপক লুটপাট
স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়কে উন্নয়নের নামে ব্যাপক লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়কের তেতুল তলা ও কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের পাশে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। সড়ক উন্নয়নের দেড় কিলো মিটার সড়কের জন্য বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা ১০% লেস দিয়ে কাজের বরাদ্দ দাড়ায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এই কাজ সড়ক ও জনপথ বিভাগীয় অফিস খুলনা থেকে টেন্ডার করান হয়েছে কিন্তু কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খানের।

ইতিমধ্যে সেলিম আজাদ খান ঝিনাইদহ শহরের আরাবপুর মোড়, তসলিমা ক্লিনিকের সামনে, যশোর ঝিনাইদহ সড়কের তেতুলতলা বাজার, কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের সামনে সহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গার রাস্তা মেরামতের ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন ঠিকাদারের নামে আর.এফ.কিউ ও ডি.পি.এম করে বিল উঠিয়ে নেয়।

সুত্রে জানা গেছে, উক্ত কাজে বেজ টাইপ এক এ ৮ ইঞ্চি উচ্চু করে ৩ ঝুড়ি পাথরে এক ঝুড়ি করে বালি দিতে হবে। তার উপর ২ ইঞ্চি পাথর পিচ দিয়ে করে তার উপর ৭ মিলি কুচি পাথর দিয়ে কারপেটিং করে কাজ শেষ করতে হবে। রাস্তা খুড়ে পূর্বের যে পাথর বাহির হয় তা আবার দেওয়া যাবে না। তারপর ও কাজের শুরুতে ৮ ইঞ্চির স্থানে উচ্চতা ৬ ইঞ্চি ১ ঝুড়ি পাথর আর এক ঝুড়ি বালি অর্থাৎ অর্ধেক পাথর আর অর্ধেক বালি ও সেই সাথে ফেলে দেওয়া পুর্বের পাথর নাম মাত্র পাশে ফেলে রেখে এই পাথরের সাথে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খানের সাথে যোগ সাজগে এই ভাবে চলছে সড়ক উন্নয়নের কাজ। যার অর্ধেক পাবে প্রকল্পের ঠিকাদার আর অর্ধেক সেলিম আজাদ খান। এ প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদের ০১৭৩০৭৮২৭৭০ নম্বরে যোগাযোগ করে কথা বলার চেষ্টা করলে সে মোবাইল রিসিপ না করার কারনে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।