৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা ডিএসসিসির

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ সোমবার ডিএসসিসির নগর ভবনে মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ বাজেট ঘোষণা করেন। এর আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলদের নিয়ে গঠিত বোর্ড সভায় বাজেট পাশ হয়। ঘোষিত বাজেটের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ এক হাজার ৭২ কোটি টাকা নিজস্ব উৎস থেকে আয় করা হবে। আর দুই তৃতীয়াংশই অর্থাৎ দুই হাজার ১২৮ কোটি টাকা সরকারি অনুদান ও বিদেশী সাহায্য থেকে পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে গত বছর সরকারি অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্য খাত থেকে এক হাজার ৭০৩ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করা হলেও আয় হয় এক হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যায় এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা। আর সরকারি অনুদান ২১৮ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করলেও পাওয়া যায় মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। এ কারণে গত অর্থ বছরে ঘোষিত তিন হাজার ১৮৩ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ডিএসসিসি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মাত্র এক হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৫৬ ভাগ।

বাজেট কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন অবশ্য নিজস্ব আয় কমে যাওয়াকে কারণ হিসেবে জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স পুন:মূল্যায়ন করতে অঞ্চল-১ এবং অঞ্চল-২ তে যখন সব প্রক্রিয়া শেষের পথে তখন একজন আইনজীবী আদালতে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্থগিতাদেশ দেন। এ কারণে ট্যাক্স বাড়ানো যায়নি। ফলে ট্যাক্স থেকে ৫০০ কোটি টাকা আয় ধরা হলেও আয় হয়েছে মাত্র ১৯৫ কোটি টাকা। এজন্য বাজেটও সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

ঘোষিত বাজেটে আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব থেকে এক হাজার ৬৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, নিজস্ব অন্যান্য খাত থেকে সাত কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে দুই হাজার ১২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
রাজস্ব আয়ের খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ট্যাক্স আদায় ৫১৫ কোটি টাকা, বাজার সালামী থেকে ৩১৩ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স থেকে ৭০ কোটি টাকা, সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে ৬৫ কোটি টাকা এবং বাজার ভাড়া থেকে ৩০ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য।

বাজেটে ব্যয়ের খাতের মধ্যে প্রধান খাত হলো উন্নয়ন ব্যয়।

এ খাতে মোট দুই হাজার ৫৬৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে ডিএসসিসির নিজস্ব টাকা থেকে ব্যয় করা হবে ৬২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং সরকারি অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে ব্যয় করা হবে এক হাজার ৯৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এ খাতে ব্যয়ের বড় অংশ সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় হবে। যার পরিমাণ এক হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

এছাড়া ভৌত কাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ৩৭৪ কোটি ৮০ লাখ, পরিবেশ উন্নয়নে ১৯২ কোটি ৫৬ লাখ এবং বিনোদনমূলক উন্নয়নে ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব খাতে ব্যয় হবে ৬০৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। রাজস্ব খাতের উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে-বেতন-ভাতা বাবদ ২৫০ কোটি, বিদ্যুৎ জ্বালানি পানি ও গ্যাসে ১৪৩ কোটি ৫০ লাখ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ২৬ কোটি ২৫ লাখ, মশক নিধনে ২৫ কোটি ৬০ লাখ এবং সরবরাহ খাতে ৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

বাজেট পেশকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালাহ উদ্দিন, সচিব মো: শাহাবুদ্দিন খান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার প্রমুখ।