হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ধাক্কায় কমছে এডিপি

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ধাক্কা লেগেছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। ফলে বড় অংকের বৈদেশিক সহায়তা ছেঁটে ফেলতে হচ্ছে। এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অক্ষমতার কারণে নয়। জঙ্গি হামলার বাস্তবতা বুঝতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ওই জঙ্গি হামলার পর মেট্রেরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমনকি পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও বিদেশীরা চলে গিয়েছিল। ফলে মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে চলতি অর্থবছরের বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাপান সফরের পর বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশী কর্মীরা ফিরে আসছেন। কত টাকা বাদ দেয়া হচ্ছে তা না বললেও পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে সাত হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। তবে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ছাড়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে এডিপির বাস্তবায়ন টাকার অংকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলেও মনে করছেন তিনি। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনামন্ত্রীর অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ দরকার। আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিদ্যুৎ খাতে বিদেশীরা বিনিয়োগ করলে তারা প্রফিট তুলে নেবে। আমাদের বিদ্যুৎ দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে অবশ্যই কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে তা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বেশি হবে না। কেননা এখনও মূল্যস্ফীতি অনেক কম রয়েছে। মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার এক লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সরকারি, বৈদেশিক ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা টাকার অংকে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। শতাংশের দিক থেকে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি অনেক বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে দাতাদের প্রতিশ্রুতি এসেছিল এক দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার আর ছাড় হয়েছিল এক দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি আসে পাঁচ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার আর ছাড় হয় এক দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি এসেছে পাঁচ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার, ছাড় হয় তিন দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি পাঁচ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, ছাড় হয় তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি এসেছিল সাত দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার আর ছাড় হয় তিন দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে ১৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এটা ভালো লক্ষণ। কারণ বিদেশীরা জানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে টাকা পাওয়া যায়। কেননা আমরা একদিন এবং এক ঘণ্টার জন্যও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। মন্ত্রী জানান, বর্তমানে পাইপলাইনে ৩৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা রয়েছে। এটা আরও বাড়বে। কেননা প্রতিশ্রুতি যত বাড়বে পাইপলাইনও ততই বাড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, প্রত্যেক প্রকল্পে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং নিরাপত্তা ব্যয় তো একটু হবেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বাড়বে।

সূত্র জানায়, মোট এডিপি থেকে কমানো হচ্ছে ১০ হাজার ৫৫০ কোটি তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাত হাজার কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে তিন হাজার ৫৫০ কোটি তিন লাখ টাকা। তবে ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ১২ হাজার ৭৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৭১ হাজার ২০০ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা ৩৩ হাজার কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন আট