ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক সাহায্য করতে পারে

ব্যাকটেরিয়ার যে অ্যান্টিবায়োটিক্স প্রতিরোধের ক্ষমতা জন্মাতে পারে, তা আগে থেকেই জানা ছিল। এখন বিজ্ঞানীরা দেখছেন, এই রেজিস্টান্ট বা প্রতিরোধে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া অনেক তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করে।
ব্যাকটেরিয়া দেকতে যেমন…

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে চার দিন ধরে মোট আট বার অ্যান্টিবায়োটিক ট্রিটমেন্ট দেন। প্রতিবার অ্যান্টিবায়োটিক্স দেবার সাথে সাথে এই ব্যাকটেরিয়ার তা প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে, যা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যা প্রত্যাশা করেননি, তা হলো এই যে, অ্যান্টিবায়োটিক্স রেজিস্টান্ট ব্যাকটেরিয়াগুলি এই অ্যান্টিবায়োটিক ট্রিটমেন্টের পর কী অসম্ভব গতিবেগের সঙ্গে বাড়বে – অর্থাৎ বংশবৃদ্ধি করবে। একটি ক্ষেত্রে আদত ব্যাকটেরিয়ার সমষ্টিগুলি বেড়ে তিনগুণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই গবেষণার ফলাফল সংক্রান্ত রিপোর্টটি ৩০শে জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড এভোলিউশন’ নামের পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটির মুখ্য রচয়িতা প্রফেসর রবার্ট বিয়ার্ডমোর পরে মন্তব্য করেন, ‘‘প্রায়ই শোনা যায়, ডারউইনের বিবর্তন বড় ধীর গতির; কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভুল আর কিছু হতে পারে না – বিশেষ করে যখন ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক্সের সংস্পর্শে আসে।”

হাই স্পিড এভোলিউশন

ব্যাকটেরিয়াদের তাদের ডিএনএ পুনর্বিন্যাস করার ক্ষমতা ‘‘চমকে দেওয়ার মতো”, বলেন অধ্যাপক বিয়ার্ডমোর। এর ফলে বিশেষ বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়তে পারে৷ ডিএনএ-র দ্রুত পরিবর্তন মানবদেহের কোষের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু ই-কোলাই-এর মতো ব্যাকটেরিয়া দৃশ্যত তার ফলে নানাভাবে উপকৃত হয়।

বিজ্ঞানীরা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে ডক্সিসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ট্রিট করার পর সেগুলিকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমিয়ে ফেলেন। এর পর সেই ব্যাকটেরিয়ার জিন সিকোয়েন্সিং করে দেখা হয়, তারা যে অ্যান্টিবায়োটিক্স প্রতিরোধের ক্ষমতা ধরে, তা কোনো ডিএনএ পরিবর্তন থেকে এসে থাকতে পারে।

এই সব ডিএনএ পরিবর্তনের মধ্যে কিছু কিছু জেনেটিক পরিবর্তন বিজ্ঞানীদের অজ্ঞাত নয়৷ যেমন একটি প্রভাব হলো এই যে, ব্যাকটেরিয়া আরো বেশি ‘‘অ্যান্টিবায়োটিক পাম্প” তৈরি করে৷ এগুলো হলো ডিএনএ-র সেই ধরনের অংশ, যেগুলি ব্যাকটেরিয়াল সেল বা কোষ থেকে ‘‘পাম্প” করে অ্যান্টিবায়োটিক্স বার করে দেয়৷ এদের বলা হয় ‘‘পাম্প ডিএনএ”।

অপরদিকে দেখা যায় যে, পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়াগুলির ডিএনএ-তে এমন কিছু অংশ অনুপস্থিত, যেগুলি একটি ‘‘সুপ্ত ভাইরাস”-এর অস্তিত্ব জানান দেয়। দৃশ্যত ব্যাকটেরিয়াগুলি অ্যান্টিবায়োটিক্স ট্রিটমেন্টের ফলে এই ‘‘ভাইরাল ডিএনএ” আংশিকভাবে হারিয়েছে, যার ফলে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলি আর নিজে থেকে ধ্বংস হতে পারছে না। অপরদিকে ‘‘পাম্প ডিএনএ” বাড়ার ফলে তারা অ্যান্টিবায়োটিক্সের প্রভাব প্রতিরোধ করতে পারছে। অতএব তারা যথেচ্ছ বংশবৃদ্ধি করতে পারছে৷ কাজেই ই-কোলাই জেনোমের দু’টি অংশে একটি ‘‘বিবর্তনবাদী শক্তি”-র বিকাশ দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

আত্মনাশের বদলে বংশবৃদ্ধি

সাধারণত ব্যাকটেরিয়ারা নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে একটি বিশেষ কারণে: এভাবে তারা কোনো জিনিসের উপরিভাগ জুড়ে তাদের ‘উপনিবেশ’ গড়ে তুলতে পারে – বাথরুমের বেসিনে যেরকম স্বচ্ছ ও পাতলা স্তর পড়ে, যাকে ‘বায়োফিল্ম’ বলা হয়।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জলের মধ্যে সব পরীক্ষা করার ফলে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলি তাদের বায়োফিল্ম তৈরির প্রবণতা ছেড়ে কোষ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে৷ ঠিক যেভাবে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া শরীরের রক্তস্রোতে বাস ও বংশবৃদ্ধি করে৷

আরো একটি বস্তু প্রমাণ হয়েছে এই পরীক্ষা থেকে: ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ড্রাগ রেজিস্টান্স বা ওষুধ প্রতিরোধের ক্ষমতার বিবর্তন বেশি ওষুধ – যেমন অ্যান্টিবায়োটিক্সের পুরো কোর্স – দিলে ঘটে না, বলে যারা মনে করেন, তারা ভুল করছেন। ‘হাই ডোসেজ’-এও ড্রাগ রেজিস্টান্স ঘটে।