প্রখ্যাত লোককবি বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোককবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ (সোমবার)। তার (বিজয় সরকারের) বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে জন্মভূমি ডুমদি গ্রামের নিজ বাসভবনে আজ অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এদিন ভক্তরা কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, ১১৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার ও শনিবার) কবির জন্মভিটা সদর উপজেলার ডুমদীতে অনুষ্ঠিত হবে দু’দিনব্যাপী লোকউৎসব ও বিজয় ভক্তদের মিলন মেলা। বিজয় সংসদের আয়োজনে দু’দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসব সফল করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ভারতসহ দেশ-বিদেশের বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও লোকজ সংষ্কৃতির পুরোধাগণ অংশগ্রহণ করবেন।
আগামি ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি।
বিজয় সংসদের সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান জানান, দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালায় রয়েছে লোককবি বিজয় সরকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা, সাড়া জাগানো বিজয় গীতি পরিবেশন, জারিগান ও কবিগানের আসর।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার প্রথম স্ত্রী বীণাপাণি দেবীর মৃত্যুর পর প্রমদা দেবীকে বিয়ে করেন তিনি। পরবর্তীতে প্রমদারও মৃত্যু হয়। দুই ছেলে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি ভারতে বসবাস করেন। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়।
ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি। মাত্র নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তার লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে। মতান্তরে তিনি ম্যাট্রিক পাস। এরপর তিনি গানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার। পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ একদিন ভাবি নাই মনে…। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/ একদিন চলে যেতে হবে…। তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’…এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন।
তিনি অনেক ইসলামী গানও কবিতা রচনা করেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের। কোন কোন মঞ্চে নিজের রচিত আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার তার মৃত্যু হয়। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণ কবি।