যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড

১৫ বছর আগে সাভারে সংঘটিত জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন (আমৃত্যু কারাদণ্ড) দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ সময় আদালত বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিদেরকে কারাভোগ করতে হবে।

সাভারের জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির করা আপিল ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেদ্র কুমার (এসকে) সিনহা নেতৃত্বে চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আদালতে আজ আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

তবে অন্যান্য মামলার আসামির ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কিনা সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে কিনা সেটা পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। তবে সাভারের মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য।

তিনি জানান, রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সাভারের জামান হত্যা মামলার আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বলে ধরে নিতে হবে।

২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৩ সালে ঢাকার একটি আদালত কামরুল, আতাউর ও আনোয়ার নামের তিন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ সাজার বিরুদ্ধে আতাউর ও আনোয়ার হাইকোর্টে আপিল করেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এ ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৭ সালে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন আপিল বিভাগে।

এ আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাভারের একটি মামলায় তিনজনের ফাঁসির আদেশ ছিল। হাইকোর্টও ফাঁসি বহাল রাখে। আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করে শুধুমাত্র সাজা কমাতে। আজ আদালত মৃত্যুদণ্ড থেকে তাদের সাজা যাবজ্জীবন করেছেন। আদেশে বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর নয়, বরং আমৃত্যু। স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।

আসামিপক্ষ এ সময় বলেছেন, দণ্ডবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন অর্থ ৩০ বছর। তখন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রায়ে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হবে। উনারা মতামত দেবেন যে আদালত যদি মনে করেন যে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হবে তাহলে তাকে মৃত্যু অবধি জেলে থাকতে হবে। এ রায়টি পেলে একটি দিক নির্দেশনা পাবো বলে আশা করি।

এখন থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ কি আমৃত্যু কারাদণ্ড কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এটা বলা যাবে না। এখানে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আইনে ৩০ বছর আছে বলে উল্লেখ করেছেন।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে দেখাবেন ৩০ বছর না। যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড। বিশেষ করে আদালত যদি এ মর্মে আদেশ দেন যে আমৃত্যুই থাকতে হবে। এ সিদ্ধান্ত অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা তা রায়ে কি বলে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, আপিল বিভাগ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ইমপ্রিজনমেন্ট ফর লাইফ) কারাবাস। তখন আমি এর প্রতিবাদ করেছি। আমি বলেছি দণ্ডবিধির ৫৭ ধরায় যাবজ্জীবন দণ্ড অর্থ সর্বোচ্চ ৩০ বছর। এছাড়া যাবজ্জীবনের আসামিরা কারাগারের রেয়াত পেয়ে দণ্ড আরও কমে আসে। যদি আমৃত্যুই হয়ে থাকে তাহলে এদের রেয়াতের কি হবে? আমি আরও বলেছি, প্রধান বিচারপতির এ মন্তব্য যেন মূল রায়ে না থাকে। তবে এটা যদি থাকে তাহলে সব আসামির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।