এবার করমজলে ১৯টি কুমিরের বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হওয়ার পর এবার ১৯টি বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে মৃত কুমির বাচ্চাগুলোর খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।

এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ওই কেন্দ্রের ৬২টি কুমিরের বাচ্চা হত্যা ও উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রোববার মৃত উদ্ধার হওয়া ১৯টি কুমিরের বাচ্চা প্রাণীভোগী কোনো হিংস্র প্রাণীর (চিতা বিড়ালের) আক্রমণে মারা পড়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। তাদের দাবি, আক্রমণকারী চিতা বিড়ালটিকে তারা গুলি করে মেরে ফেলেছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারী করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র হতে দু’দফায় ৪৩টি বাচ্চা খোয়া যায়। এর দু’দিন পর ওই এলাকা থেকে ৯টি কুমিরের বাচ্চার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করে বন বিভাগ। এ ঘটনার পর রোববার ১৯টির খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধারের কথাও জানায় বন বিভাগ। কুমিরের বাচ্চা মারা যাবার খবর পেয়ে করমজলে যান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে খুলনার দাকোপ থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করা হয়।

সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রোববার দিবাগত রাতে মাংশভোজী এক হিংস্র প্রাণী (চিতা বিড়াল) বাচ্চাগুলোর উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে মেরে ফেলা হয় চিতা বিড়ালটিকে।

এর আগে নিখোঁজ হওয়া ৪৩টি কুমিরের বাচ্চার কোনো হদিস মেলেনি এখনও পর্যন্ত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও এদিন নতুন করে ১৯টি কুমিরের বাচ্চা মারা যাবার পর তদন্ত কমিটি অধিক তদন্তের জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে।

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বন সংরক্ষক মোঃ জাহিদুল কবির জানান, কুমির প্যানে থাকা বাচ্চাগুলো রুটিন মাফিক দেখভালের সময় একটি প্যানে ১৬টি ও আরেকটি প্যানে ৩টি কুমির মৃত দেখা যায়। এগুলো প্যানের (কৃত্রিম পুকুর) পাশের দিকে মৃত অবস্থায় বিছিন্নভাবে ছড়ানো ছিটানো ছিল। প্রাথমিকভাবে মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলোর শরীরে কামড় ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হিংস্র বন্যপ্রাণী আক্রমণ চালিয়ে এ বাচ্চাগুলো হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

এদিকে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বন বিভাগের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপদ ও প্যানের দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে অন্য প্যানে থাকা ২১৫টি কুমির বাচ্চা। রবিবার রাতেই ওই প্যান এলাকায় ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানায় বন বিভাগ। যাতে সহজে অবলোকন করা সম্ভব হয় কিভাবে কুমির বাচ্চা গায়েব ও হত্যার ঘটনা ঘটছে।

সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি।

৪৩টি কুমিরের বাচ্চা পাচার বা চুরির এবং সর্বশেষ রবিবার রাতে ১৯টি কুমিরের বাচ্চা মাংশভোজী হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে মারা যাবার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২১৫টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।