তিন জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৩

রাজধানী ঢাকা, কক্সবাজার ও বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে আলাদা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার গভীর রাত ও মঙ্গলবার ভোরে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে সাগর (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন তাঁতীবাজারের চিত্রা সিনেমা হলের কাছে এ বন্দুকযুদ্ধ হয়।

পুলিশের দাবি, সাগর ডাকাত দলের সদস্য। গত কয়েক মাস আগে ইসলামপুরে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২৫ লাখ টাকা ছিনতাই মামলার অন্যতম আসামি তিনি।

এছাড়া সাগরের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খান যুগান্তরকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য সাগরের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, বগুড়ার কাহালুতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নব্য জেএমবির পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামিউল (৩২) নিহত হয়েছেন।

সোমবার গভীর রাতে উপজেলার পাতাঞ্জ গ্রামে কথিত এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, নিহত মুসা গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান নেতা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ট সহযোগী। তার বাড়ি পাবনার সদর উপজেলায়। তবে তার বাবা ও গ্রামের নাম জানাতে পারেনি তারা।

কাহালু থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী জানান, সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার পাতাঞ্জ গ্রামে সড়কের পাশে একদল সন্ত্রাসী কোনো অপরাধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা টহল পুলিশের ভ্যান দেখে গুলি ছুড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি করে।এতে অন্যান্য হামলাকারীরা পালিয়ে গেলেও সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থলে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন ও তিনটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ ভ্যানে দুটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, নিহত ব্যক্তি নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের চার জেলার প্রধান সমন্বয়ক এবং গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলায় গ্রেফতার রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ট সহযোগী আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামিউল। তিনি গত বছরের ২০ মে কুষ্টিয়া সদরের মজুমপুর এলাকায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ছানাউল্যাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত। এছাড়া একই বছরের ৫ জুন তিনি নাটোরের বনপাড়া বাজারে নিজে উপস্থিত থেকে অন্য সহযোগীরা মিলে মুদি দোকানী সুনীল গোমেজকে (৬৮) চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, সিরাজগঞ্জ জেলায় জঙ্গি সংগ্রহ, আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ, জিহাদী বই বিতরণ, চাঁদা সংগ্রহ এবং হিজরতের জন্য সঙ্গীদের প্রস্তুত করাসহ বিভিন্ন জঙ্গি তৎপরতায় প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজে লিপ্ত জঙ্গি সদস্যরা গ্রেফতার হলে তারা আদালতে যে জবানবন্দি দেয় তাতে নিহত আবু মুসার  নাম আসে।

গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে কাজিপুর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় (নং-০১) আটক তিন জঙ্গি আদালতে জবানবন্দিতে তার (মুসা) নাম প্রকাশ করে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তাকে গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপর হলেও সে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

অপরদিকে মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক নয়াপাড়ার পূর্ব পাশে পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবদুস সাত্তার ওরফে সব্বির আহমদ নামে একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশের দাবি, নিহত আবদুস সাত্তার একজন সন্ত্রাসী। তার নামে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন।

নিহত আবদুস সাত্তার উপজেলার কেরুনতলী এলাকার মাজরপড়া গ্রামের মৃত নুরুসছাফার ছেলে।

মহেশখালীর থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভোরে হোয়ানক নয়াপাড়ার পূর্ব পাশে পাহাড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এসময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে আবদুস সাত্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।

এসময় পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছে। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঘটনাস্থল থেকে ৬টি বন্দুক ও ১৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি জানান, নিহত আবদুস সাত্তার ওরফে সব্বির  একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।