সিরিজে ফিরল ভারত

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর স্বাগতিকদের দরজায় যেন পরাজয় কড়া নাড়ছিল। তবে সে অবস্থা থেকে বোলারদের কাঁধে ভর করেই সিরিজে ফিরেছে কোহলি বাহিনী। অজিদের বিপক্ষে ৭৫ রানের জয়ে ইডেনের সেই সুখ স্মৃতিকেই যেন মনে করিয়ে দিল টিম ইন্ডিয়া। চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-১ এ সমতা গড়লো কোহলিরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৭৪ রান তুলতেই অজিদের টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠান ভারতীয় বোলাররা। এ ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের প্রথম শিকার হন প্রথম ইনিংসে ভালো খেলা ম্যাট রেনশো। ইশান্ত শর্মার বলে ঋব্দিমান সাহার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলীয় সংগ্রহ তখন ২২ রান।

এরপর ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথের ব্যাটে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল অজিদের। তবে দলীয় ৪২ রানেই ফেরত যান ওয়ার্নার। ব্যক্তিগত ১৭ রানে অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। দলীয় ৬৭ এবং ৭৪ রানে দুটি উইকেট তুলে নেন উমেশ যাদব। যাদবের প্রথম শিকার হন শন মার্শ। ব্যক্তিগত ৯ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান মার্শ। যাদবের দ্বিতীয় শিকার স্টিভেন স্মিথ ফেরেন ব্যক্তিগত ২৮ রানের মাথায়। এ অবস্থায় পিটার হ্যান্ডসকম্ব এবং মিচেল মার্শের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে বেরসিক অশ্বিনের ঘূর্ণি জাদুর শিকার হয়ে মার্শ ফেরেন ১৩ রান করে। দলীয় ১০১ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

এরপরেই শুরু হয় অশ্বিন যাদু। মার্শের বিদায়ের পর হ্যান্ডসকম্বের সঙ্গে জুটি বাধতে আসেন ম্যাথু ওয়েড। তবে অশ্বিন ঘূর্ণিতে শূন্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওয়েড। ওয়েড ফেরার পর মিচেল স্টার্ক মাঠে নামেন। তবে হ্যান্ডসকম্বের সঙ্গে জুটি বাধার আগেই তাকে ফেরত পাঠান সেই অশ্বিন। দলীয় ১০৩ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরত যান তিনি।

হ্যান্ডসকম্বের সঙ্গে জুটি বাধতে মাঠে নামেন ও’কিফে। তবে তাকে জাদেজার শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়।

দলীয় ১১০ রানের মাথায় ও’কিফের বিদায়ের পর ওই রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া হ্যান্ডসকম্ব। ৬৭ বলে ২৪ রান করে অশ্বিনের পঞ্চম শিকার হন তিনি। এরপর নাথান লায়নকে তুলে নিয়ে অজিদের ইনিংস ১১২ রানে শেষ করে দেয় অশ্বিন।

এরআগে প্রথম ইনিংসে ভারত করেছিল ১৮৯ রান। জবাবে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া থেমেছিল ২৭৬ রানে। ফলে দুই ইনিংস মিলে অজিদের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৮ রানে।

তৃতীয় দিন শেষে ভারত করেছিল ৪ উইকেটে ২১৩ রান। দিন শেষে ১২৬ রানের লিডে বড় অবদান ছিল চেতশ্বর পূজারার ৭৯ এবং অজিঙ্কা রাহানের ৪০ রান। তবে চতুর্থ দিন মঙ্গলবার এই দু’জন দলকে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি। ১১৮ রানের জুটি গড়ে পূজারা ৯২ এবং রাহানে ৫২ করে সাজঘরে ফেরার পরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারতীয় শিবির, ৬১ রান যোগ করতেই হারায় ৬ উইকেট।

প্রথম টেস্টে স্পিনার স্টিভ ও’কিফের (১২ উইকেট) কাছে ধরাশায়ী হয় ভারত। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ঘাতক হয়ে আবির্ভূত হন আরেক স্পিনার নাথান লায়ন, একাই তুলে নেন ৮ উইকেট।

আর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ধস নামান পেসার জন হ্যাজলেউড। ৬৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে করেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। দুটি করে উইকেট নেন ও’কিফ ও মিশেল স্টার্ক।

এর আগে প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। দলের হয়ে শন মার্শ সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন। এছাড়া ম্যাট রেনশো ৬০ এবং ম্যাথু ওয়েড ৪০ রান করেন।

ভারতের পক্ষে রবীন্দ্র জাদেজা ৬টি, রবীচন্দন অশ্বিন ২টি এবং উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মা উভয়েই ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

ব্যাঙ্গালুরুতে শনিবার টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। অজি স্পিনার নাথান লায়নের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৮৯ রানে অলআউট হয় তারা। ভারতের হয়ে লোকেশ রাহুল একাই লড়াই করেন। তিনি ৯০ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে লায়ন ৫০ রানে ৮টি উইকেট লাভ করেন। এছাড়া মিচেল স্টার্ক ও ও’কিফে ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

প্রসঙ্গত, প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারে ভারত। প্রথম ইনিংসে ১০৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৭ রান করে অলআউট হয়েছিল কোহলি বাহিনী। এতে ৩৩৩ রানের বড় জয় পায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া।