জনগণই পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে : মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেছেন, গণমাধ্যমের এখন বড় দুঃসময় যাচ্ছে। প্রেস নোট নির্ভর সাংবাদিকতা চলছে। গণমাধ্যমগুলো আইনশৃংখলা বাহিনীর দেয়া তথ্য হুবহু ছাপতে বাধ্য হচ্ছে। আইনগত সুরক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় একমাত্র জনগণই পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে।

আজ সোমবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের সেমিনার হলে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার।

বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজে সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রুহুল আমিন গাজী, ডিইউজে সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ডিইউজের ইউনিট প্রধানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রাশেদুল হক, ফয়েজ উল্লাহ ভুঁইয়া, বাছির জামাল প্রমুখ।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইইবির সাবেক সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া। সভায় রিপোর্ট পেশ করেন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ও কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, ডিইউজের যুগ্ম-সম্পাদক শাহিন হাসনাত।

বিএফইউজে মহাসচিব এম আব্দুল্লাহসহ অসুস্থদের সুস্থতা কামনা ও মৃত সাংবাদিকদের জন্য দোয়া কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন, দৈনিক সংগ্রামের সহকারী বার্তা সম্পাদক সা’দাত হোসাইন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মাহমুদুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ’৭৫ সালে আইনের মাধ্যমে পত্রিকা বন্ধ করে দিলেও এখন জোর করে পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নেই কোথায়ও। যে চার ধরনের সুরক্ষা থাকার কথা তার তিনটিই এখন অনুপস্থিত। আইনগত সুরক্ষা না থাকায় একটির পর একটি কালো আইন বিশেষ করে আইসিটি আইন করে পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। দেশের প্রধান সারির বিরোধীদলগুলো শক্তিশালী অবস্থান না নেয়ার কারণে রাজনৈতিক সুরক্ষাও মিলছেনা। সহযোগী গণমাধ্যমগুলোর ঐক্য যে সুরক্ষা দিতে পারতো তাও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সহযোগী গণমাধ্যমের মধ্যে দুটি শ্রেণী বর্তমানে সরকার এবং সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপাত্যবাদী শক্তির পক্ষে কাজ করছে। আর একটি শ্রেণী জনগনের বাক স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও তারা কিছু করতে পারছেনা। এ অবস্থায় একমাত্র চতুর্থ সুরক্ষা-জনতার শক্তিই পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে।

সাধারন জনগণ ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে সাংবাদিকরাই। সাংবাদিকরাই পারেন জনগনকে উজ্জিবিত করতে।

দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনগনকে দ্বিমুখী লড়াই চালাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিকে দেশীয়ভাবে লড়াই করতে হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবেশী আধিপাত্যবাদী শক্তি বা আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, চূড়ান্ত অত্মত্যাগের মানসিকতা নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ক্রস ফায়ার, রিমান্ড, মামলার ভয় করলে চলবে না। জনগণ জেগে উঠলে ফ্যাসিবাদ পালাতে বাধ্য হবে।

শওকত মাহমুদ বলেন, যখন কোনো শাসক মনে করে তারা যা বলবে তাই হবে, তারা ইচ্ছা করলে ১০টা পদ্মা সেতু করতে পারবে, যাকে ইচ্ছা তিনদিন না খাইয়ে রাখতে পারবে, তখন মনে করতে সে শাসকের পতন অত্যাসন্ন।

তিনি কুরআনের বরাত দিয়ে বলেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলাও জিহাদ। এখন যেসব জ্ঞানী-গুণী চুপ করে থেকে মনে করছেন তারা পার পাবেন, তা হবে না। তারাও পতনের মুখে পড়বেন। যারা ভিন্ন মতের পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ হওয়ায় খুশি হচ্ছেন তারাও পার পাবেন না।

শওকত মাহমুদ বলেন, ’৭১ সালে সাংবাদিকরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য বর্তমানে সাংবাদিকদের যে সংগ্রাম চলছে তা জাতীয় সংগ্রামে পরিণত হবে। তিনি অবিলম্বে সব বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া এবং সাংবাদিকদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আবদাল আহমদ বলেন, দেশের গণমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত। স্বাধীনভাবে কেউ লিখতে পারছে না। অনেকগুলো মিডিয়া বন্ধ করে শ’ শ’ সাংবাদিককে বেকার করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে জনগনকে জেগে উঠতে হবে।

সভার সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার সভায় আট দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ভীতিমুক্ত গণমাধ্যমের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বন্ধ মিডিয়া অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাসহ সব নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য পৃথক ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে। সাংবাদিকদের নামে দেয়া সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের নামে নির্যতানমূলক ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।