খালেদার নাইকো মামলা চলতে বাধা নেই

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ফলে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

দুদকের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।

এর আগে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদকের করা আবেদন এক সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার করেছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তারও আগে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

এরপর হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে দুদক। দুদকের করা আবেদন শুনানি নিয়ে গত ১২ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিষয়টি ১৬ মার্চ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে আদেশ দেন।

খালেদা জিয়াসহ ১১ আসমির বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের জানান, একই যুক্তিতে বিচারিক আদালতে করা খালেদা জিয়ার আবেদনও ১৫ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আদালত। পরে এর বিরুদ্ধে ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি নেত্রী। এরপর মঙ্গলবার আদালত হাইকোর্টে মওদুদ আহমদের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মামলার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত।

সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বরে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। পরের বছরের ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।

মামলার পর খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট, সেই সঙ্গে রুলও জারি করা হয়। প্রায় সাত বছর পর গত বছরের শুরুতে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক। রুলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১৮ জুন খালেদার আবেদন খারিজ করে মামলার ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত বছরের ৩০ নভেম্বর জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা।

খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমদ ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম) এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ক্ষেত্রে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় হাইকোর্টের আদেশে মওদুদ আহমেদের মামলায় রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার কাযক্রম স্থগিত করেন আদালত।