ড. ইউনূসের অর্থের খোঁজে এনবিআর

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশে তহবিল স্থানান্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল স্থানান্তরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সোমবার এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

সূত্রে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক, দান গ্রহীতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারের ১৯টি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিতভাবে বিদেশে তহবিল স্থানান্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল স্থানান্তর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে এনবিআর। এরই অংশ হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ সেন্টারের দান গৃহীত তিনটি প্রতিষ্ঠানের (ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার) ব্যাংক হিসাব তলবসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাপ্ত হিসাব বিবরণী আয়কর বিবরণীর সঙ্গে মিলিয়েও পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০১১-১২ হতে ২০১৩-১৪ করবর্ষে ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার সর্বমোট ৭৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান গ্রহণ করেছেন।

ওই সূত্রে, আয়কর বিভাগ দানকর আইন, ১৯৯০ এর ১০ ধারা অনুযায়ী তার উপরোক্ত দানের বিপরীতে সর্বমোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা কর ধার্য করে। দাবিকৃত দানকর যথাসময়ে পরিশোধ না করায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী তার ওপর ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।

বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বিপুল অর্থ দান করেছেন ড. ইউনুস । ওই দানকৃত অর্থ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউনূস তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ আমেরিকা’ থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দান করেছেন।

‘গ্রামীণ আমেরিকা’ নামে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় ইউনূস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। গ্রামীণ আমেরিকার শেয়ার বা বিনিয়োগ তার আয়কর নথিতে প্রর্দশন করেননি।

আরও জানা যায়, কারিগরি সহায়তা ও উপার্জন কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ, ইউএসএআইডি, বিশ্বব্যাংক, নেদারল্যান্ডস, গ্রামীণ হেলথ প্রোগ্রামে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার তহবিল নিয়ে গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ করবর্ষে কার্যক্রম শুরু করে।

গ্রামীণ ট্রাস্ট কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯-১০, ২০১০-১১ করবর্ষে যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ও ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা অনুদান গ্রহণ করে।

দানকৃত অর্থ আয়কর বিবরণী ও অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬-৯৭ হতে ২০১৫-১৬ করবর্ষ মেয়াদে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ মোট ৩৮টি দেশে সর্বমোট ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ২০১৫-১৬ করবর্ষে উক্ত ঋণের স্থিতি ছিল ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ওই ঋণের টাকা বিদেশে ঋণ পাঠানোর পদ্ধতি এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অনুমতি সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই বলে জানা গেছে।

এনবিআরের দাবি, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসের আয়কর রেকর্ড পরিষ্কার নয়। খ্যাতিমান ব্যক্তি হয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাঠানোয় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিগত এক দশকে তিনি যে পরিমান আয়ের উপর কর প্রদান করেছেন, করমুক্ত আয় হিসেবে দাবি করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি। সম্পদ ও প্রকৃত আয় গোপন করার ক্ষেত্রে তিনি সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। পরদিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও বলেছেন, কর সুবিধা অপব্যবহারের বিষয়ে ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর একটি অনুসন্ধানরত সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এনবিআর ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও কর ফাঁকির বিষয়ে জোর তদন্ত পরিচালনা করছে।