রামোস, মোরাতার গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল

অধিনায়ক সার্জিও রামোস ও আলভারো মোরাতার গোলে উজ্জীবিত নাপোলিকে মঙ্গলবার ৩-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়নস লীগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ১১বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ।

ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান বলেছেন, ‘জিততে পেরে আমরা খুশী। প্রথমার্ধে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে, ঐ সময়টা নাপোলি আমাদের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ঘুড়ে দাঁড়াই।’

গত মাসে সানতিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জয়ী রিয়াল নেপলসে গতকাল একটি কঠিন ম্যাচের অপেক্ষায় ছিল। বিশেষ করে ম্যাচের ২৪ মিনিটেই যখন ড্রিয়েস মারটেনসের গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় তখন রিয়াল বেশ চাপে পড়ে। কিন্তু নাপোলি কোচ মরিজিও সারি আগেরদিনই সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বিশ্বের ধনী ক্লাবটির থেকে যে হুমকি শুনেছিল ম্যাচ শেষে তাই প্রমানিত হলো। বিরতির পরে জিদানের গ্যালাকটিকোরা দারুনভাবে নিজেদের ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বিরতির ছয় মিনিট পরে রামোসের হেডে সমতা আসে। ৫৭ মিনিটে মারটেনসের আত্মঘাতি গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল। ম্যাচের শেষের দিকে মারটেনস রিয়ালের গোল এরিয়ার মধ্যে ফাউলের শিকার হলে নাপোলি পেনাল্টির আবেদন করেছিলো। যাতে সাড়া দেননি তুরষ্কের রেফারী কুনেয়াট কাকির। উল্টো অতিরিক্ত সময়ে জুভেন্টাসের সাবেক স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতার গোলে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-২ ব্যবধানে এগিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে রিয়াল।

ম্যাচ শেষে সারি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় গোলটিতেই মূলত আমরা লড়াই থেকে ছিটকে পড়ি। আমাদের হয়তবা আরো একটু আগ্রাসী হওয়া উচিত ছিল। এটা আমাদের জন্য একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা। কারন ৫৫ মিনিট পর্যন্ত আমরা ভাল অবস্থায় ছিলাম। খারাপ লাগছে আজ সমর্থকদের প্রত্যাশাটা একটু বেশী ছিল। এজন্য আমরা তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কারন আমরা মনে করি তাদের জন্য আরো কিছু দেয়াটা আমাদের উচিত ছিল। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে রিয়াল বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। শারিরীক ভাবেও তারা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে।’
প্রথমবারের মত শেষ আটে পৌঁছাতে হলে নাপোলিকে অলৌকিক কিছু করে দেখাতে হতো। বিশেষ করে ফুটবল পাগল ইতালীয় এই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে একটি অঘটনের অপেক্ষায় ছিল সবাই। প্রথমার্ধে মরিজিও সারির দল ১১টি শট নিয়েছে। রিয়ালের বিপক্ষে ২০১৩ সালের জুভেন্টাসের হয়ে ১৫টি শটের থেকে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু মারটেনস, লোরেনজে ইনসিগনে কিংবা হামসিক রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। অথচ প্রায় ৫৭ হাজার দর্শক পূণ্য উদ্যোমে পুরোটা ম্যাচে আজ্জুরিদের সমর্থন যুগিয়ে গেছে। রিয়ালের পক্ষে প্রথম ভাল একটি সুডোগ পেয়েছিলেন রোনাল্ডো ও বেনজেমা। লুকা মোদ্রিচের ব্যাক-পোস্ট ক্রস থেকে এই দুজনের ব্যর্থতায় গোল পায়নি রিয়াল। টনি ক্রুসের ক্রস থেকে এরপর গ্যারেথ বেলের ভলি রেইনা সহজেই তালুবন্দি করেন। কিন্তু ২৪ মিনিটে হামসিকের সাথে বল আদান প্রদান করে মারটেনস যখন নাভাসকে পরাস্ত করেন এর দায়ভার রিয়াল রক্ষনভাগকে দিতেই হয়। পুরো সান পাওলো স্টেডিয়াম উচ্ছাসে ভেসে ওঠে। এরপরপরই নাপোলি ব্যবধান প্রায় দ্বিগুন করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু হামসিকের শট গোলবারের উপর দিয়ে বাইর চলে যায়।

বিরতির ৬ মিনিট পরে ক্রুসের কর্ণার থেকে রামোসের হেড রিয়ালকে সমতায় ফেরায়। এই গোল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সারি বলেছেন, ডেড বল পরিস্থিতিতে রামোস বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। চলতি বছর একইভাবে সে সাত থেকে আটটি গোল করেছে। ৫৭ মিনিটে আবারো ক্রুসের ক্রস থেকে রামোসের হেড মারটেনসের গায়ে লেগে রেইনাকে পরাস্ত করলে আত্মঘাতি গোলে ম্যাচে প্রথমবারের মত এগিয়ে যায় রিয়াল। আর সেই সাথে নাপোলির সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। ম্যাচ শেষের অতিরিক্তি সময়ে মোরাতা আরেকটি গোল করলে বড় ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে রিয়াল।