আহমেদ তেপান্তর: শবনম। উপমহাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী। শুরুটা বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হলেও পরবর্তী থিতু হন পশ্চিমে। সফলতার দেবী দু’হাত ভরে তার গলায় বরমাল্য দিয়েছেনও। এরই প্রমাণ তিনি তার তিন দশকে উর্দ ছবির মধ্যে সবচেয় প্রভাবশালী ও পদক অর্জন করেন। ফলশ্রুতিতে দেশটিতে সফরে গিয়ে আবদার শুনতে হয় ‘পাকিস্তানি ছবিতে কবে অভিনয় করছেন?’ শবনমও ভুবন ভোলানো হাসিতে ভালো গল্প পেলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে জানান।
করাচি লিটারেরি উৎসবে গিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এক সময়ের ড্রিমগার্ল শবনম। বৃহস্পতিবার করাচি প্রেসক্লাবের আমন্ত্রণ রক্ষায় সেখানে গেলে উপস্থিত সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, অভিনেতা-অভিনেত্রী নানা পেশার সবাই তাকে অভিনয়ে ফেরার জন্য অনুরোধ করলে তিনি এ কথা বলেন।
শবনম বলেন, ‘শিল্পী-খেলোড়ের কোনো সীমানা নেই। তারা সীমানার বাইরে গিয়ে বন্ধন তৈরি করেন। তাদের জন্ম অসীমত্বকে এক করা। তাই ভালো চরিত্র উপযোগী গল্প পেলে আমিও প্রস্তুত ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে। আমি শিল্পী অভিনয়ের তৃষ্ণা আমারও আছে, যদিও বয়স হয়েছে তবুও ভাববো।’ আপনাদের প্রস্তাবব্যস্ত সময়ের গত বৃহস্পতিবার হাসি বরমাল্যবিখ্যাত চিরকালীন মন ভোলানো।
এ সময় শবনম তার এই সফরে সকলের উষ্ণ অভ্যার্থনা আর আথিথিয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উপস্থিত সবার সঙ্গে সহাস্যে সেলফি তুলেন। এদের মধ্যে অনেকেই আসেন অটোগ্রাফের বায়না নিয়ে। তিনি তাদেরও নিরাশ করেননি বলে পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন সূত্র জানায়।
অনুষ্ঠানে শবনের সঙ্গে খ্যাতিমান চিত্রনায়ক নাদিম বেগ, প্রিয়াঙ্কা ঝা, মুস্তফা কোরেশি এবং আসিফ রেজা মীরের মত তারকারা উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষীয়ান অভিনেতা মুস্তফা কুরেশী এ সময় শবনমের স্বামী সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষকে স্মরণ করেন।
প্রসঙ্গত, প্রথমবারের মত উপমহাদেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শবনম করাচি সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারে বিকালে করাচি বিমান বন্দরে পৌঁছান। এপ্রিলের মাঝামাঝি তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ২০১২ সালের এই প্রথম স্বামী বিখ্যাত সরকার রবিন ঘোষকে ছাড়া তিনি পূর্বের কর্মস্থল করাচি গেলেন। গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি উপমহাদেশের বিখ্যাত এই সুরকার না ফেরার দেশে চলে যান।
উল্লেখ্য, চার দশকে উর্দু ভাষায় ১৮০টি চলচ্চিত্রের অভিনয় করে পাকিস্তানের রেকর্ড সংখ্যক ১১বার নিগার পুরস্কারের পাশাপাশি তিনবার পাকিস্তানের জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জন্মভূমি বাংলাদেশে ফেরেন। কাজী হায়াতের পরিচালনায় ও ঢাকা প্রোডাকশনের ব্যানারে তিনি ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ আম্মাজান চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন শবনম।
শবনম তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্যময় অভিনয় জীবনে রহমান, মুস্তফা, খলিল, নাদিক বেগ, ওয়াদি মুরাদ এবং মোহাম্মদ আলীর মত প্রভাবশালী চিত্রনায়কদের সঙ্গে জুটি গড়েছেন। তবে তাদের মধ্যে নাদিম-শবনম জুটি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়।