রাজশাহীতে স্ট্রবেরী চাষ অনেককে স্বচ্ছল করেছে

গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলে স্ট্রবেরী চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে কিছু সৌখিন চাষিসহ অনেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী চাষ করে স্বচ্ছল হয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় সুস্বাদু এই স্ট্রবেরী ফল ক্রমশ স্থানীয় জনগণের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে কৃষক পর্যায়ে স্ট্রবেরী চাষ সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্ট্রবেরী চাষ আলু ও বেগুন গাছ জন্মানোর মতোই সহজ। প্রত্যেক বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্ট্রবেরীর চারা সারিকরে রোপণ করতে হয়।’
তিনি বলেন, স্ট্রবেরী একটি ‘উচ্চমূল্যের ফসল। এর চারা রোপণের এক মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং মার্চ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
প্রত্যেক গাছে প্রায় আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রাম ওজনের ফল ধরে এবং এক বিঘা জমিতে ছয় হাজারের মতো গাছ জন্মে উল্লেখ করে ড. ইসলাম বলেন, কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি স্ট্রবেরীর মূল্য প্রায় ছয়শ’ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন জাড়ালে স্থানীয় ও বহির্বিশ্বে এর ভাল বাজার পাওয়া যাবে এবং কৃষকরা এতে লাভবান হবেন।
তিনি জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় স্ট্রবেরী চাষ সহজ ও অধিক লাভজনক বিধায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে বেকার যুবকরা স্ট্রবেরী চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আইসক্রিম, জ্যাম, জেরি, চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরিতে এই ফল ব্যবহার করা হয় বলে দেশের বিভিন্ন বাজারে যুবকরা স্ট্রবেরী সরবরাহ করেন।
দেশে স্ট্রবেরী চাষের শীর্ষ গবেষক, বিভিন্ন জাতের উদ্ভাবক ও উৎপাদনকারী পর্যায়ে চাষ সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী অধ্যাপক ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশী জাতের স্ট্রবেরী বিশ্বের সেরা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা টিস্যু কালচার পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিন জাতের স্ট্রবেরী উদ্ভাবন করেছি।’
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. হোসেন আরো বলেন, ‘এসব জাতের স্ট্রবেরী এ অঞ্চলের মাটি ও পরিবেশে সহায়ক, যা প্রদর্শনী মাঠে প্রয়োগ করে দেখা গেছে।’ তিনি গত কয়েক বছর যাবত তার নিজস্ব হর্টিকালচার খামারে এসব জাতের স্ট্রবেরী চাষ করছেন।
তিনি জানান, চারা রোপণের পর নতুন জাতের এই স্ট্রবেরী গাছ থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে স্ট্রবেরী চাষ করলে প্রায় দেড় লাখ টাকা উপার্জন করতে পারেন।
এই শীর্ষ গবেষক বাসসকে বলেন, কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি স্ট্রবেরীর মূল্য ৩শ’ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে স্থানীয়ভাবে এই ফলের বড় বাজার পাওয়া যাবে এবং কৃষকরা ক্রমশ লাভবান হবেন। ২০০৩ সালে এই তিন জাতের স্ট্রবেরী চাষ করে ভাল ফলাফল এবং স্থানীয় আবহাওয়া এই ফল চাষে উপযোগী পাওয়া যায়।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক (কৃষি) এটি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় জেলাসমূহ ছাড়া দেশের সর্বত্রই স্ট্রবেরী চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরীর চাষ করা হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
কৃষিবিদ রফিক বলেন, ‘কৃষকদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি লাভজনক ফসল। বৃহত্তর পরিসরে এর চাষ করা হলে উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন ফলটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছবে। এতে আর স্ট্রবেরী আমদানির প্রয়োজন হবে না।’
তিনি বলেন, অধিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকার কারণে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে আসার জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।