সুন্দরবন রক্ষার হরতালে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আহুত হরতাল কর্মসূচিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মিছিলে ৯ দফায় হামলা চালিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ থেকে কবি কাজী নজরুলের সমাধি সৌধ পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুহুর্মূহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা। ছাত্র  ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরের বুকে গুলি লেগেছে। এছাড়া ছাত্রফন্টের নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, বেসরকারী ইউনিট ছাত্র ইউনিয়নের জয় বনিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কাঁকন, কিবরিয়া হোসেন ও মিজানুর রহমানসহ অন্তত ১০ জনকে তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

সুন্দরবন রক্ষার হরতালে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল চুক্তি বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সকাল  ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করে। এরপর সাড়ে ছয়টায় মিছিলটি টিএসসি প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে যেতে চাইলে পাবলিক গন্থাগারের সামনে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, গরম পানি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিপরীত দিক থেকে  পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য  করে উল্টো ইটের টুকরা ছুড়ে মারে । এতে কোনো পুলিশ আহত হয়নি।

এসময় চারপাশ কাঁদানে গ্যাসে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। আশপাশের পথচারিরা দৌড়ে  চারুকলা অনুষদে আশ্রয় নেয়। প্রত্যক্ষদর্শী মনিরুল হক আকাশ জানান, আমার মনে হলো আমি নরক দেখতেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের এই অমানবিক হামলাটা এতটাই জঘন্য যে কোনো কিছুর সঙ্গে এইটা তুলনা করার মত না। চোখের জ্বালাপোড়ায় টিকতে পারছিলাম না মনে হলো, মারা গেলেই ভাল হতো। মানুষ মানুষের ওপর এভাবে এত নিচে নেমে জঘন্যভাবে হামলা করতে পারে আজ নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছি না।

সকাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ দফা হামলা চালানো হয়েছে। আশপাশে এক আতঙ্ক অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা মেডিকেলগামী রোগী হাসপাতালে যেতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, শাহবাগ রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে দুটি হাসপাতালও রয়েছে। তাই শাহবাগের সড়কগুলো বন্ধ হলে রোগীসহ সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। হরতালকারীরা রাস্তা অবরোধ করতে চেয়েছিল। পুলিশ তাতে বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তখন আমরা জলকামান ও টিয়ারশেল ব্যবহার করি।

রমনা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, এখানে দু’টি হাসপাতাল আছে। কয়েক হাজার রোগী আছে, হরতাল করলে তাদের চিকিৎসা ব্যহত হয়। আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হলে পুলিশ বাধা দেবে না।

তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে হামলা হয়না। হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই পুলিশ হরতালকারীদের বাধা দিয়েছে।’

ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আমিনা নিতু বলেন, দমন-পীড়ন আমাদের কাছে নতুন কিছু না। যতক্ষণ দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। সুন্দরবনের পক্ষে জনগণ আছে । এরকম বুলেট, টিয়ারশেল মেরে আমাদের কেউ দমাতে পারবে না।

সর্বশেষ সকাল ১০টার দিকে আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিলটি  চারুকলার সামনে থেকে শাহবাগের মোড়ে দিকে গেলে পুলিশ আবারও টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে মারে। এসময় আশেপাশে টিয়ারশেলের খোসা পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এসময় চারুকলা অনুষদের সামনে ‘রামপাল চুক্তি ছুড়ে ফেল, সুন্দরবন রক্ষা কর’ শীর্ষক এক সমাবেশ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

সমাবেশে ইমরান হক রুম্মন জানান, আমরা  একে একে হাসপাতালে যাব রাবার বুলেট বুকে নিব তবুও সুন্দরবন দিব না। আমাদের দেশের ৯৯ ভাগ সুন্দরবনকে সমর্থন জানিয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের এই আন্দোলন ৯৯ ভাগ বনাম ১ ভাগ মানুষের আন্দোলন। গরীব মানুষের টাকায় কেনা রাবার বুলেট আমাদের বুকে মেরেছে আমরা মরে যাব তবুও সুন্দরবন দেবো না।

সুন্দরবন রক্ষার হরতালে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০সমাবেশে বক্তার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে  ক্ষমতাসীনদের পেটোয়া বাহিনী, ছাত্রলীগও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। আজকে পুলিশের এই আক্রমণ অযৌক্তিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। অকারণে টিয়ারশেল মেরে আমাদের ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না। আওয়ামীলীগের বিশেষজ্ঞ দালালরা উদ্ভট, বিভ্রান্তিকর চিন্তার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।

এদিকে মিরপুরেও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে হরতাল সমর্থকরা ব্যারিকেড তৈরির চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধায় প্রধান রাস্তায় পিকেটাররা অবস্থান নিতে পারেননি। পল্টনে পিকেটাররা দফায় দফায় মিছিল করলেও সংঘর্ষ হয়নি। পুলিশ মিছিল করতে বাধাও দেয়নি।

গেলো ২৬ নভেম্বর সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মহাসমাবেশে এ হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়। এ হরতালে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।