বাংলাদেশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রশংসায় বিশ্ব

সম্প্রতি দেশে হয়ে যাওয়া পৃথক জঙ্গি অভিযানে বাংলাদেশ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বেশ প্রশংসা করেছে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থায় সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট পুলিশ, র‍্যাব, সেনা কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি ইউনিট। মাসখানেক আগে সীতাকুণ্ডতে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পর সিলেট, মৌলভীবাজার এবং কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু প্রতিটি অভিযানের জঙ্গিরা শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নেয়। আর এ বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিভিন্ন দেশের ‘এন্টি টেরোরিজম’ বিভাগের কর্মকর্তারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘কাউন্টার টেরোরিজম’ কর্মকর্তা এশিয়া টাইমসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অপারেশন টি ‘আমাদের চেয়ে বেশি সফল’ ছিল ‘অবিরাম ও অবিচল’ এবং এ। এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুমতি নেই বলে নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না তিনি।

বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ সমূলে জঙ্গিদের উৎখাত করতে তৎপর হয়ে উঠলে জঙ্গিরাও শুরু করে আত্মঘাতী হামলা। কিন্তু গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশের তৎপরতার কারণেই সম্ভবত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তারা সবচাইতে প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমূলে উৎপাটনের জন্য কাজ করছে তারা। আর এটা বেশ কাজ করছে।

সেই সঙ্গে তারা শঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, শিগগিরই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ শেষ হবে না।

ভারতের পূর্বাঞ্চলে থাকা সামরিক বিভাগের সাবেক চীফ অব স্টাফ লেফটেনেন্ট জেনারেল জন মুখার্জি এশিয়া টাইমসকে বলেন, আত্মঘাতী হামলায় এখন পর্যন্ত বড় কোন ক্ষতি হয়নি। তার কারণ জঙ্গি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য বিষয়টি আরো ভয়ংকর হতে পারে।

ভারতের সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল কাশ্মীর ও ‘সেভেন সিস্টার’ ভুক্ত রাজ্যে কাজ করা এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, এই সন্ত্রাসীরা নিজেদের বিদ্রোহী আচরণের কারণে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এটি দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা এখনই হোক বা পড়ে, তাদের এই আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।

সিলেটে হওয়া অভিযানে ৭৮ জন জিম্মিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, চারদিন ধরে চলেছে অভিযান। খুব বড় ক্ষতি ছাড়াই শেষ পর্যন্ত অভিযানটি শেষ করা গেছে। একজন কর্মকর্তা এই ঘটনায় নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত অভিযান সফল ছিল বলে মনে করেন জন মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘যে কোন স্ট্যান্ডার্ডে এটিকে সফল অভিযান বলা যায়’।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ সার্ভিসে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক এবং বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্লগার, প্রকাশক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকারী এবং রাজনীতিবিদদের হত্যার পর গুলশানে হওয়া হলি আর্টিজান হামলায় অনেকে মনে করেছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু আসলে এই আক্রমণের পর নতুন এ রূপ নিয়েছে বাংলাদেশে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। বাংলাদেশ পুলিশ ও প্যারা মিলিটার ফোর্স কখনও কখনও সামরিক বিভাগের সহায়তায় দৃঢ়তার সঙ্গে জঙ্গিদের মোকাবেলা করেছে।

গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জেএমবি’র তামিম চৌধুরী, তানভির কাদেরি এবং অবসর নেয়া মেজর জাহিদুল ইসলামের মত ৮ শীর্ষ কর্মকর্তা প্যারা-মিলিটারি ফোর্সের অভিযানে নিহত হয়। এ ছাড়াও পরিকল্পিত অভিযানে মধ্য সারি ও নিম্নসারির বেশ কিছু নেতাকে আটক বা নিহত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এই অভিযানগুলো দেখে মনে হচ্ছে ইসলামপন্থী জঙ্গিবাদকে দৃঢ়ভাবে দমন করা হচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ  সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, গুলশান হামলার পর মনে হয়েছিল বাংলাদেশ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। কিন্তু তা হয়নি। দৃঢ়তার সঙ্গে পুলিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিহত করেছে।

কিন্তু এত দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এই মনোভাব বজায় থাকলে এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ চালিয়ে গেলে এক সময় এই সমস্যা থেকেও বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্লগার, প্রকাশক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকারী এবং রাজনীতিবিদদের হত্যার পর গুলশানে হওয়া হলি আর্টিজান হামলায় অনেকে মনে করেছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু আসলে এই আক্রমণের পর নতুন এ রূপ নিয়েছে বাংলাদেশে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। বাংলাদেশ পুলিশ ও প্যারা-মিলিটার ফোর্স কখনও কখনও সামরিক বিভাগের সহায়তায় দৃঢ়তার সঙ্গে জঙ্গিদের মোকাবেলা করেছে।