জঙ্গি তৎপরতা: বাড়তি সতর্কতা সারাদেশে

Bangladeshi police officials stand alert on a street in Dhaka on April 23, 2013, during a nationwide strike called by the Bangladeshi Nationalist Party (BNP) in protest against the detention of their leaders. The opposition alliance?s 36-hour nationwide shutdown is being held to press for the release of their top leaders. Recent weeks in the South Asian nation have seen a nationwide crackdown on the opposition including the detention of more than 200 senior officials of the Bangladesh Nationalist Party (BNP) and the entire leadership of the largest Islamic party, Jamaat-e-Islami. AFP PHOTO/Munir uz ZAMAN (Photo credit should read MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images)

অতিসাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু জঙ্গি হামলা বা হামলার চেষ্টাকে ঘিরে সারাদেশেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন জঙ্গি সন্ত্রাস। কিভাবে এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করা যাবে তা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা রকম ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল জনপ্রতিনিধিকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ততা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের সকল বিচারালয় ও বিচারক-বিচারপতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পুলিশ সদর দফতর সকল জেলায় পুলিশকে বাড়তি সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ১৪ দিনের জন্য শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে সাধারণ দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সব মিলিয়ে সারাদেশ চলছে জঙ্গি সতর্কতার মধ্যে দিয়ে।

তিন সহযোগীসহ জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখায় ও রিভিউ খারিজ হওয়ার পর থেকে নতুন করে সারাদেশে জঙ্গি উৎপাত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে। সম্ভবত আজ কালের মধ্যে ফাঁসির বিষয়টি ফায়সালা হয়ে যাবে। কিন্তু এই ফাঁসির রায় কার্যকর করার আগেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করে মাঠে নেমে পড়ে জঙ্গিরা।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির ১২ সদস্যের সুসাইডাল স্কোয়াডের সদস্যরা সারাদেশে নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে। ‘ফিয়াদি স্কোয়াড’ নামে এই স্কোয়াড খুবই শক্তিশালী। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে তারা আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই গোয়েন্দা সংস্থা তাদের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।

গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ যুবকদের একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধনে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট কাজে অর্থায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটে জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি তছনছ করে দেওয়ার পর গোয়েন্দারা এখন সুইসাইডাল স্কোয়াড সদস্যদের খুঁজছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি গোয়েন্দারা।

আত্মহনন ও জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে সঠিক পথে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম আত্মহননকে সমর্থন করে না। আত্মহননকারীর স্থান জাহান্নামে। তাই আত্মহনন ও জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে সরকার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে।

সারাদেশে জনপ্রতিনিধিদের জঙ্গিবিরোধী প্রচারে জনসাধারণকে আরো সম্পৃক্ত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, চলবে এবং কঠোর হাতে তা দমন করা হবে।

এদিকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের সকল অধস্তন আদালতের বিচারক, কর্মচারী ও আদালত সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তার পক্ষ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ উদ্বেগের বিষয় অবহিত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ হতে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

গত ১৭ মার্চ ঢাকার আশকোনায় র্যাব ব্যারাকে ও ২৪ মার্চ এয়ারপোর্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পর ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর জন্য একজনের বেশি স্বজন না যেতে অনুরোধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর জন্য একজনের বেশি স্বজন না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ পাশাপাশি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন উপলক্ষে দর্শনার্থী প্রবেশে ১৪ দিনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।