দুর্গাপুরে ছাগল চুরি: দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

এবার ছাগল চুরির অপরাধে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল মোতালেব ও তার সহযোগিরা।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের আন্দুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  নির্যাতনের শিকার ওই দুই কিশোর আমগাছী সাহার বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। নির্যাতনের পর ওই দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানাও আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঝালুকা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডলের নেতৃত্বেই ওই সালিশ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। এদিকে ওই শালিস বৈঠকে দুই কিশোরকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ গোপনে ধারন করার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আন্দুয়া গ্রামের ক্যাচিনি ফকিরের ছেলে রেজাউলের বাড়ি থেকে ছাগল চুরি হয়। উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জার্জিস হোসেন ও পলাশবাড়ি গ্রামের রতন নামের দুই কিশোর ওই ছাগলটি চুরি করে মহানগরীর মতিহার থানার হরিয়ান বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের বাজারের নিরাপত্তা কর্মীরা আটক করেন।

পরে ওই দুই কিশোরের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আন্দুয়া গ্রামে খবর দিলে সকাল ছয়টার দিকে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতলেব তাদের নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে আন্দুয়া গ্রামে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে ছাগল মালিক রেজাউলের বাড়ির পাশেই গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। সালিশী বৈঠকে ওই দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে তাদের পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এ সময় ওই গ্রাম্য সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল, আন্দুয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব ও হাড়িয়াপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মির্জা আব্দুল লতিফ। নির্যাতন শেষে দুই কিশোরকে তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার রাতে ওই দুই কিশোরকে পেটানোর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নির্যাতিত ওই দুই কিশোরের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, ‘অল্প বয়সী ওই কিশোরেরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মম ভাবে পেটানো কতটা যৌক্তিক ও আইনসিদ্ধ।’ এ ব্যাপারে তারা আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান।

ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব জানান, ছাগল চুরির কথা প্রথমে তারা স্বীকার না করায় তাদের গাছে বেঁধে রাখা হয়। তবে তাদের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। জরিমানার ১৬ হাজার টাকা কার কাছে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই হাজার ৫০০ টাকা ছাগল মালিক রেজাউলকে দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকার মধ্যে কিছু টাকা ওই দুই কিশোরকে ধরতে যারা সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। আর কিছু টাকা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নকল্পে দান করা হয়েছে। তবে ওই গ্রাম্য সালিশে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নাই। কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’