ট্রাম্প বিরোধী আন্দোলনের প্রেরণা বাংলাদেশি-আমেরিকান নারী

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলা নারী আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে মুনিরা আহমেদ নামে এক নারী। যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্স অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী ৩২ বছর বয়সী এই নারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে হওয়া ‘উইমেন লং মার্চ’-এ অনেক আন্দোলনকারীর হাতে এ সময় ছিল মুনিরা আহমেদের ছবি।

ছবিটিতে মুনিরা আহমেদকে দেখা যায় একটি হিজাব মাথায় দেয়া অবস্থায়। হিজাবটি মূলত আমেরিকান পতাকার নকশায় তৈরি। আর ছবিটি এডিট করেছেন শেফার্ড ফেইরি। ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার ‘হোপ’ থিমে তৈরি একটি ছবি নিয়ে কাজ করে পরিচিতি পান ফেইরি।

ছবিটি সম্পর্কে মুনিরা আহমেদ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, এটি শুধু বলতে চাওয়া, ‘আমিও তোমাদের মতই আমেরিকান’। ওয়াশিংটনে ট্রাম্প বিরোধী আন্দোলনের পর নিউইয়র্কে এসে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি আমেরিকান এবং আমি মুসলিম। আর এ দুটি পরিচয়েই আমি গর্বিত।

এমপ্লিফায়ার ফাউন্ডেশনের অধীনে ‘উই দ্য পিউপাল’ নামক একটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই ছবিটি তৈরি করেন ফেইরি।

ফেইরি এখানেও ওবামার ছবির মত ‘ব্লক স্টাইল’ ব্যবহার করেছেন। ছবিটির বিষয়ে মুনিরার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই ছবিটি যেই বার্তা দিচ্ছে, তার জন্য আমি গর্বিত। এটা শুধু কারো বিরোধিতা করার জন্য নয়। মূলত কিছু ধারণ করছে এটি। ছবিটি বলতে চাচ্ছে, আমিও তোমার মতই আমেরিকান।

ওয়াশিংটনে ট্রাম্প বিরোধী মার্চে যোগ দেয়ার পর কংগ্রেসের একজন নারী মুনিরাকে এই ছবিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। মুনিরা গার্ডিয়ানকে জানায়, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সে আমাকে চিনতে পারছে। কারণ ছবির মেয়েটি হিজাব পড়ে আছে। আর আমি সেখানে হিজাব ছাড়া গিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, মেয়েদের একটি দল জানতে চেয়েছিল, আমি কবে থেকে হিজাব পড়া বন্ধ করেছি। উত্তরে আমি বলেছি, কখনই আমি হিজাব পড়িনি।

ছবিটি প্রায় এক দশক আগের। কুইন্সের একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার রিদওয়ান আধামির তোলা। আর তা ফেইরির ছোঁয়া লাগার পর প্রথম অনলাইনে ভাইরাল হয়ে ওঠে মুসলিম একটি ব্লগে পোস্ট করার পর।

মুনিরা বলেন, এই ছবিটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় জীবন রয়েছে। তিনি বলেন, একটি মুসলিম ব্লগে কেউ ছবিটি দেয়ার পর বেশ দ্রুত তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এটা ছিল অনলাইন যে কোন কিছু ভাইরাল হওয়ার আগের কথা। আর তারপর বর্তমানে ছবিটি আবারো ভাইরাল হয়ে উঠছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। যা পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় বড় একটি প্লাটফর্মে ভাইরাল হচ্ছে।

মুনিরা ট্রাম্পের শহরেই বড় হয়েছে ছোট বেলা থেকে। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। এখানেই জন্ম নেন মুনিরা। তার পরিবার বর্তমানে মিশিগানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।  নাইন-ইলাভেন পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষী যেই ধারণা জন্ম নিয়েছে তার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন মুনিরা ও রেদওয়ান।

মুনিরা ট্রাম্পের বিজয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অধিকাংশের ভোট না পেয়েও সে নির্বাচিত হয়েছে। আর থেকেও দুঃখের বিষয়, অনেক আমেরিকান মনে করছে এই দেশ থেকে ভিন্ন ধর্ম-গোত্রের মানুষদের বের করে দেয়া উচিত। আমি জানি এটা আমেরিকার অধিকাংশ মানুষের নৈতিক অবস্থান নয়। দ্য গার্ডিয়ান।