ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১১ দিনে ৪২ মামলা

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১১ দিনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা দায়ের হয়েছে। শপথ নিয়ে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে তুলকালাম বাধিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সবচেয়ে বেশি বিতর্কের মুখে পড়েছেন। ইতিমধ্যে পাঁচ রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিক ও অ-আমেরিকান দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। আরও ছয়টি রাজ্যে একই ধরনের মামলার প্রস্তুতি চলছে। ডেমোক্রেটিক শাসনাধীন রাজ্যগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে। খবর সিএনএন, গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ ও এএফপির।

ওভাল অফিসে পা দেয়ার আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এর বেশিরভাগই করেছেন হাই প্রোফাইল ব্যবসায়ীরা। আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে- যৌন হয়রানি, বিনিয়োগকারীদের ঠকানো এবং তার নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।

ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করেছে ওয়াশিংটন রাজ্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস ও ভার্জিনিয়া। অন্যদিকে শহর কর্তৃপক্ষ হিসেবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করেছে লস অ্যাঞ্জেলেসের সানফ্রান্সিসকো। ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন সোমবার মামলার ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বব ফার্গুসন বলেছেন, যদি তিনি মামলায় সফল হন তাহলে আমেরিকাজুড়ে প্রেসিডেন্টের অবৈধ কার্যক্রম বাতিল হবে। এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের কমপক্ষে ১৬ জন অ্যাটর্নি জেনারেল। তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে আমেরিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ও বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওই ১৬ জন অ্যাটর্নি জেনারেলের একজন হলেন বব ফার্গুসন।

বব ফার্গুসন আরও বলেছেন, ওয়াশিংটনভিত্তিক তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান- মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও এক্সপেডিয়া তাকে এ মামলা করতে সমর্থন দিচ্ছে। তার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর জে ইনসলি।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক শিনেডারম্যান, ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল মাউরা হেলি ও ভার্জিনিয়া কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউ জার্সি, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া ও হাওয়াই অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও বিমানবন্দরে মুসলিম যাত্রীদের হয়রানি ও নাজেহালের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে পেনসিলভানিয়া ও হাওয়াই রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা কীভাবে ও কোনো আদালতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়- তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

হাওয়াই রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ডগলাস চিন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নির্বাহী আদেশ অসাংবিধানিক। মূলত ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় এমন রাজ্যগুলোই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ার চেষ্টা করছে।’ তবে শেষ পর্যন্ত কতগুলো রাজ্য তাতে যোগ দেবে- তা বলতে পারেননি ওই অ্যাটর্নি জেনারেলরা। পেনসিলভানিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল জোস শাপিরোর মুখপাত্র জো গ্রেস বলেন, ‘এ নিয়ে নিশ্চিতভাবেই একটি আলোচনা চলছে।’

পররাষ্ট্র দফতরের এক হাজার কর্মকর্তার স্মারকলিপি : সাতটি দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অভ্যন্তরেও। এরই মধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন পররাষ্ট্র দফতরের প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা। রয়টার্স জানায়, ট্রাম্পের এ আদেশের ব্যাপারে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে।

পররাষ্ট্র দফতরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম শ্যাননের কাছে প্রায় এক হাজার কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র দফতরের ডিসেন্ট চ্যানেলের মাধ্যমে ওই স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়। ‘ডিসেন্ট চ্যানেল’ একটি আনুষ্ঠানিক ফোরাম, যেখানে কর্মচারীরা তাদের ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো নীতি নিয়ে তাদের অসন্তোষ জানাতে পারেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, দফতরের আরও কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা তাদের স্বাক্ষর সংযোজন করবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে ৭ হাজার ৬০০ কূটনীতিক এবং ১১ হাজার বেসামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন।

সোমবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার জানিয়েছিলেন, ওই স্মারকলিপির ব্যাপারে তিনি জানেন। সে সময়, কূটনীতিকদের হুশিয়ারও করেন তিনি। স্পাইসার বলেছিলেন, ‘হয় এ কর্মসূচির সঙ্গে তাদের থাকতে হবে, নয়তো তারা যেতে পারে।’

ওই আপত্তি স্মারকলিপির খসড়া হাতে পাওয়ার দাবি করে রয়টার্স জানায়, অভিবাসন ইস্যুতে নির্বাহী আদেশ ইস্যু করার আগে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের মাঝে একটি বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারেন এমন গুঞ্জনে সে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষস্থানীয় চার কর্মকর্তার পদত্যাগের কারণেও কূটনীতিকদের মধ্যে খানিকটা অসন্তোষ রয়েছে।

ট্রাম্পের নীতিতে নিরাপদ ভাবছেন মাত্র ৩১ ভাগ মার্কিনি
সাত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন নাগরিক নিজেদের আগের চেয়ে নিরাপদ মনে করছেন। অন্যদিকে আগের চেয়ে নিজেদের কম নিরাপদ মনে করছেন ২৬ ভাগ মার্কিনি।

তবে ট্রাম্পের নীতিতে শক্তিশালী বা কম জোর সমর্থন রয়েছে ৭৯ ভাগ নাগরিকের। বিপরীতে ট্রাম্পকে বিরোধিতা কিংবা অপছন্দ করছেন মাত্র ৪১ ভাগ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স/ইপসোসের চালানো এক জনমত জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।

জানুয়ারির ৩০ ও ৩১ তারিখে চালানো জনমত জরিপটি প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার। এতে দেখা যায়, জঙ্গিবাদ থেকে মার্কিন জনগণকে রক্ষার দাবিতে সাত মুসলিম দেশের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা ১২০ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ৪৯ শতাংশই সমর্থন করছেন। তবে দলগত বিচারে তাদের মতামতের পার্থক্য স্পষ্ট বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩১ শতাংশ মনে করেন যে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় তারা আগের চেয়ে নিরাপদে রয়েছেন। ২৬ শতাংশ মনে করছেন, তারা আগের চেয়েও অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন। তবে ৩৩ শতাংশের মতে, ওই নিষেধাজ্ঞায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। জরিপে অংশগ্রহণকারী ডেমোক্রেটদের ৫৩ শতাংশ ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশের সঙ্গে তীব্র দ্বিমত পোষণ করেন। অপরদিকে, রিপাবলিকানদের ৫১ শতাংশ ট্রাম্পের সঙ্গে শক্তভাবে একাত্মতা জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞায় কয়েকজন রিপাবলিকান নেতাও ভিন্নমত জানিয়েছেন। অ্যারিজোনার সিনেটর জন ম্যাককেইন ও সাউথ ক্যারোলিনার লিন্ডসে গ্রাহাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ওই নির্বাহী আদেশ এই বার্তাই প্রকাশ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে আসা মুসলিমদের গ্রহণ করতে চায় না।’

ওই জনমত জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ মার্কিনিই দেশে মুসলিম শরণার্থীদের স্বাগত না জানিয়ে খ্রিস্টানদের স্বাগত জানানোর বিরোধী। ৭২ শতাংশ ডেমোক্রেট ও ৪৫ শতাংশ রিপাবলিকানসহ মোট ৫৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এ মতামত জানিয়েছেন।