বিএনপিই প্রথম দেশের উন্নয়নের রূপকল্প নিয়ে এসেছিল : মির্জা ফখরুল

বিএনপি কাউকে নকল বা অনুসরণ করে না মন্তব্য করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই বিএনপিকে অনুসরণ করে, বিএনপির পলিসিকে নকল করেছে এবং করে। আমরা আবারো বলছি- বিএনপি কাউকে নকল বা অনুসরণ করে না। আসলে আওয়ামী লীগ ঈর্ষান্বিত হয়ে অরাজনৈতিক ভাষায় ভিশন-২০৩০-এর সমালোচনা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। আগামী ৩০ মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের কর্মসূচি নির্ধারণে যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব বলেন।

বিএনপি আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করেছে এটা সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি কারো ভিশন অনুসরণ করেনি বরং আওয়ামী লীগ বরাবরই বিএনপির ভিশন অনুসরণ করেছে।

প্রসঙ্গত, বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০১ সালে বিএনপিই প্রথম দেশের উন্নয়নের রূপকল্প নিয়ে এসেছিল। ২০০৮ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিএনপির সেই ভিশন নকল করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঈর্ষান্বিত হয়ে অরাজনৈতিক ভাষায় ভিশন-২০৩০-এর সমালোচনা করছে। কোনোকিছু গভীরভাবে খতিয়ে দেখে বিবেচনা করার মেধা ও যোগ্যতার অভাবে গৎবাঁধা মেঠো সমালোচনা করা তাদের পুরনো অভ্যাস।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বরাবর ভিশনারি দল। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ভিশনারি নেতৃত্ব। এদেশে রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পায়ন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সহ সকল ক্ষেত্রে যে আধুনিকায়ন ও ইতিবাচক সংস্কার তা বিএনপি, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার হাত ধরেই এসেছে। একদল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র জিয়া উপহার দিয়েছেন। সংসদীয় গণতন্ত্র খালেদা জিয়া উপহার দিয়েছেন স্বৈরাচারকে পরাজিত করে নর্বাচিত হয়ে এসে।

তিনি বলেন, বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিএনপি দিয়েছে। সমাজতন্ত্রের নামে লুটতরাজের কমান্ড ইকোনমির জায়গায় জিয়া বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনীতিকে মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও ভ্যাট বিএনপির অবদান। যোগাযোগ, শিক্ষা, নারীশিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুগান্তকারী অবদান বিএনপির।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু, যুবশক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও আইটি মন্ত্রনালয় বিএনপি স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও ইতিহাস প্রণয়নের উদ্যোগ বিএনপির। কৃষিতে আধুনিক ও যান্ত্রিক সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বিপ্লব ঘটিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সাফল্য বিএনপির। বিদেশীদের ফেলে দেয়া পুরনো কাপড় আমদানি করে ব্যবহারের বদলে বস্ত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন জিয়া।

তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় নকল বন্ধ এবং বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে দেশে ছাপানো বই পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্বের সূচনা বিএনপির হাতে। পরিবেশ দূষণ রোধে বিএনপি সরকার যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছিল ক্ষতিকারক পলিথিন ও কালো ধোঁয়ার থ্রি হুইলার যান নিষিদ্ধ করে। দেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জীবিত আটক করে তাদের বিচার বিএনপি সরকার নিশ্চিত করে জংগীবাদের সাংগঠিক কাঠামো ও শক্তি নিঃশেষ করে দিয়েছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, যমুনা সেতুর অর্থায়ন ও নির্মাণকাজের ৭০% বিএনপি সরকারই করেছিল। গার্মেন্ট শিল্পের দ্বারোদঘাটন ও বিকাশ, বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান বিএনপির অবদান। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিএনপিই প্রথম ভিশন পরিকল্পনা পেশ করে ২০০১ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে। পরে আওয়ামী লীগ তা অনুসরণ করেছে। এ রকম বহু ক্ষেত্রেই তারা আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি অনুসরণ করেছে। এতে আমরা আপত্তি নয় বরং গৌরব অনুভব করি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভিশন দিলেও তা বাস্তবায়ন করে না। সে যোগ্যতা তাদের নেই। তারা দলীয়করণ, লুটপাট, দুর্নীতি, অত্যাচার, অপশাসন আর গলাবাজি ও ধাপ্পায় লিপ্ত থাকে। তাদের দিনবদলের ঘোষণা এখন এক করুণ পরিহাসে পরিণত হয়েছে। বিএনপি যা বলে তা বাস্তবায়ন করে। অতীতে তা প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে ইনশাল্লাহ্।

তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সার্ক গঠনের উদ্যোগ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই নিয়েছিলেন। বিএনপি আমলে অর্থনীতিতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬% এ পৌঁছেছিল। আমরা দায়িত্বে থাকলে প্রবৃদ্ধির হার এতদিনে ডবল ডিজিটে পৌঁছাতো। এখন সড়ক ও সেতু নির্মাণ বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এ থেকে লুটপাটের একটা চিত্র পাওয়া যায়। আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও শেয়ারবাজার শক্তিশালী করেছিলাম। এখন সব তছরুপ করা হচ্ছে। বিদেশে টাকা পাচারের যে হিসেব বেরিয়েছে তার কী কৈফিয়ত দেবে সরকার? ইন্টারনেট বিএনপি-ই পাইওনিয়ার।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয় কখন? ১৯৯৩ সালে বুলেটিন বোর্ড সিস্টেম বা বিবিএস পদ্ধতিতে ডায়াল-আপ-এর সাহায্যে ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অফলাইন ই-মেইলের মাধ্যমে এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। দুটো যুগান্তকারী ঘটনাই ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের আমলে। তবে এই সুযোগ খুব সীমিত থাকায় ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিএনপি সরকারই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে সরকার ভিস্যাট ড্যাটা সার্কিট সাবস্ক্রাইব করার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে। এ প্রক্রিয়া চলাকালেই জাতীয় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব নেয়।

তিনি আরো বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু-তিন জন উপদেষ্টার বিশেষ আগ্রহ ও তাগিদে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ঠা জুন দেশে প্রথম ভিস্যাট বেজ ডাটা সার্ভিস কমিশনড করা হয়। সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় ইন্টারনেট সার্ভিস। ইন্টারনেট কানেকশন স্থাপনের পর ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ কখন সাবমেরিন ক্যাবলের সংগে যুক্ত হয়? ২০০৬ সালে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার এই বিশাল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তির মহাসড়কে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার ও গতিবেগ সঞ্চারিত হয় এবং ব্যয় কমে ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য হয়। তথ্য প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় কে সৃষ্টি করেন?

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াই বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের স্রষ্টা। ২০০২ সালে তার সরকারই আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে। কালিয়াকৈরে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের প্রকল্পও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারই হাতে নিয়েছিল। বাংলাদেশে তার আগে কেউ এমন উদ্যোগের কথা কল্পনাও করেনি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো এমন বহু উদ্যোগ বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি সরকার নিয়েছে। আমি শুধু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর কথা বললাম। খালেদা জিয়া প্রমাণিত করেছেন অন্য সকলের ক্ষেত্রের মতন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সূচনাও এদেশে বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে। বিএনপির নির্বাচিত সরকারই বাংলাদেশে প্রথম জরুরি ভিত্তিতে প্রথম একশ’ দিনের কর্তব্য তালিকা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করে।