শিবপুরে আজিজাকে পুড়িয়ে মারার পিছনে পরকীয়া ধারনা করছে পুলিশ

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ  আজিজা নামে শিবপুরের খৈনকুট গ্রামের স্কুল ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত শনিবার রাতে শিবপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত আজিজার পিতা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে চাচী বিউটি আক্তার, বিউটির মা সানুয়ারা, চাচাতোভাই রুবেল, আজিজার দাদী তমুজা বেগমকে নামে এবং অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামী করে এই মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের মধ্যে শনিবার আটক করা দাদী তমুজা বেগমকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে  রবিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালত আজ সোমবার রিমান্ড আবেদনের উপর শুনানীর দিন ধার্য করেছে।

পক্ষান্তরে একই দিন আটককৃত কেরসিন বিক্রেতা আব্দুর রশিদকে মামলার স্বাক্ষী হিসেবে রাখার চিন্তা করছে পুলিশ। এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যার পূর্বে আজিজার লাশ খৈনকুট গ্রামের নিজ বাড়ীতে পৌছলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। শত শত মানুষ আজিজাকে দেখার জন্য তাদের বাড়ীতে ভীড় করে। এসময়  আজিজার পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজনের বুকচাপড়ানো আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভাড়ী হয়ে উঠে। তাদের কান্নার সাথে সাথে অনেক উপস্থিত লোকজনের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে। একই দিন রাতে এশা’র নামাজের পর নামাজে জানাজা শেষে নিহত আজিজাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আজিজার মৃত্যু নিয়ে মানুষের মুখে মুখে নানা ধরনের কথা উচ্চারিত হতে থাকে। শুধুমাত্র মোবাইলের জন্য আজিজাকে হত্যা করা হয়েছে, এ কথা সচেতন মানুষ বিশ্বাস করতে চাইছে না। তারা বলছে ভিন্ন কথা। কেউ কেউ বলছে মোবাইল চুরির ঘটনা একটি উপলক্ষমাত্র। এর পিছনে আরো কিছু লুক্কায়িত থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছে, আজিজার চাচী বিউটি আক্তারের সাথে কারো পরকীয়া থাকতে পারে। বিউটি আক্তারের স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে চাচী বিউটি আক্তার গ্রামের জনৈক ব্যক্তির সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। আর এই পরকীয়া প্রেমের ঘটনা ঘটনাক্রমে আজিজার চোখে পড়ে যায়। আর এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই মোবাইল চুরির নাটক রচনা করে বিউটি আক্তার।

তবে পরকীয়া প্রেমিক কে তাকে এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি গ্রামের লোকজন কিংবা আইনপ্রয়োগকারী লোকজন। তবে পুলিশ এ ধরনের একটি পরকীয়া ঘটনাকে সামনে নিয়েই আজিজা হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। শিবপুর থানা পুলিশের ওসি সৈয়দুজ্জামান সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, পরকীয়া প্রেমের ঘটনা এখনো সু-স্পষ্ট নয়। তবে আমরা এ ধরনের একটি ঘটনাকে সামনে নিয়েই তদন্ত লিপ্ত হয়েছি। তদন্ত কার্যক্রমকে বেগবান করার জন্য রবিবার র‌্যাব-১১ এবং ডিবি পুলিশ, সিআইডি পুলিশের লোকজন আজিজাদের বাড়ী গিয়ে তদন্ত চালিয়েছে। তারা এলাকার বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউই এখনো পর্যন্ত চাচী বিউটি আক্তার, বিউটির মা সানুয়ারা, চাচাতোভাই রুবেলকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। চিহ্নিত করতে পারেনি কথিত পরকীয়া প্রেমিককে।

পুলিশ ও লোকজনের ধারনা বাড়ীর অদূরে রাতে কাঠাল বাগানে আজিজাকে যখন আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় তখন সেখানে বিউটি আক্তার, তার মা সানোয়ারা উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতে ৩ জন লোক আজিজার গায়ে কেরসিন ঢেলে আগুন লাগিয়েছে। এ সময় মোজাম্মেল হক নামে একজন প্রোল্টি ব্যবসায়ী চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আজিজাকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে আজিজার সারা শরীর পুড়ে যায়। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যার ফলে অগ্নিসংযোগকারী ৩ দুর্বৃত্তকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। একমাত্র চাচী বিউটি আক্তার ও তার মা সানুয়ারা, চাচাতো ভাই রুবেল এই ৩ অগ্নিসংযোগকারীকে চিনে। পুলিশ বলেছে, তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে হত্যাকান্ডের মূল ঘটনা প্রকাশ হবে। উন্মোচিত হয়ে যাবে অগ্নিসংযোগকারীদের মুখোশ।