চ্যানেল সেভেন বাংলায় চাকরি দেয়ার নামে শরীফের প্রতারণা

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ  বেসরকারি টিভি চ্যানেলে চাকরি করিয়ে দেয়ার নামে সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এ চক্রের মুলহোতা হচ্ছে আরীফুল হক আরীফ নামের এক যুবক। শরীফের নের্তৃত্বে প্রতারক চক্র নানাভাবে আকৃষ্ট করছে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের। ইদানিং প্রতারকরা কথিত টিভি চ্যানেল সেভেন বাংলায় চাকরি দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা নিয়ে তারা ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়,কাউকে কাউকে রিসিভারও দিয়েছে। এই নিয়োগপত্র ও টিভি চ্যালের রিসিভার দেয় সেভেন বাংলা টেলিভিশন কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড নামে স্বঘোষিত একটি প্রতিষ্ঠান। নিয়োগপত্রের প্যাডে তারা রাজধানীর টয়েনবী সার্কুলার রোড ৪৭/২ মন্নান টাওয়ার ঢাকা-১০০০ এবং ১৩/এ,৮তলা,বাংলা মোটর ঢাকা-১০০০,এর ঠিকানা ব্যবহার করে। কিন্তু এ ঠিকানা ওরকম কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই নেই।

সম্প্রতি সেভেন বাংলা ও আরিফুল হক আরিফ নামের দু’টি ফেস বুক ফেইজ খুলে সেখানে চ্যানেল সেভেন বাংলা অন ইয়ারে আসছে এধরনের একটি চটকদার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-থানা পর্যায়ে টিভি চ্যানেল রিপোর্টার (পুরুষ/মহিলা/ছাত্রছাত্রী) এসএসসি/বিএ প্রয়োজন। যোগাযোগের জন্য ০১৬১৩১৪০৭৭৭ ও ০১৭৭৭২০২৬২৯, ইমেইল channelseventv@gmail.com প্রদান করা হয়। চাকরি প্রত্যাশী প্রতারিতরা বলেন, তাদের সরাসরি নিয়োগের কথা বলে প্রথমে বায়োডাটা নেয়া হয়। পরে তাদেরকে কিছু প্রশ্ন সাপেক্ষে নিয়োগ প্রদানের নামে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এই টাকা বিকাশের (মোবাইল ব্যাংকিং) মাধ্যমে প্রতারকরা গ্রহণ করেছে।

কক্সবাজার শহরে প্রতারিত যুবক এসসি শাহীন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রথমে ফেসবুকে ও পরে মোবাইলের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় রিপোর্টার নিয়োগের লোভনীয় অফার দিয়ে আকৃষ্ট করার পর রিপোর্টার পদপ্রার্থী হয়ে ই-মেইলে বায়োডাটা পাঠান। চক্রের লোকরা তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে চায়, তিনি ল্যাপটপ চালাতে পারেন কিনা।

চ্যানেল সেভেন বাংলায় চাকরি দেয়ার নামে শরীফের প্রতারণাএসসি শাহীন ওদের জানান, তিনি ল্যাপটপ চালাতে পারেন। তাকে তিনমাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে, বেতন মাসে ১৬ হাজার টাকা। পারফরম্যান্স ভালো করলে চাকরি স্থায়ী হবে। শাহীনকে  বিকাশ নং-০১৯১৩৮৬১৩৪০ (ব্যক্তিগত) নাম্বার দিয়ে ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। তিনি ৬০ হাজার টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে পাঠিয়ে দেন।

চ্যানেল সেভেন বাংলায় চাকরি দেয়ার নামে শরীফের প্রতারণাওরা তাকে বলে, এই টাকা জামানাত হিসেবে নেওয়া হল। চাকরি স্থায়ী হোক আর না হোক টাকা তাদের ফেরত দেয়া হবে। প্রতারিত শাহীনের তথ্য অনুযায়ী, তার কাছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অথবা এসএ পরিবহণের মাধ্যমে নিয়োগপত্র ও রিসিভার পাঠানো হবে। পরে একাধিবার এসব মালামাল পাঠানোর কথা বললেই এমডি দাবীদার আরিফুল হক আরিফ মোবাইল বন্ধ রাখা হয়, মোবাইল সংযোগ কেটে দেন নয়তু অটোরিসিভ করা হয়। গত ৭ মার্চ ২০১৭ ইং কথিত চ্যানেল সেভেন’র লোগো উন্মোচন ও ১৮ মে অন এয়ারে আসার কথা বললেও তা হয়নি। এভাবে মাসের পর মাস ঘুরাতে থাকে লোকজনকে। এভাবেই প্রতারণার শিকার লোকজন তাদের ভুল বুঝতে পারেন। তার ব্যাপারে কক্সবাজারে প্রতারণা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে এবং এই প্রতারক আরিফের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করা হয়েছে বলে জানান এই শাহীন।

একই অভিযোগ করেন রামু উপজেলার মোঃ সোহেল। তার কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। একই কৌশলে তার কাছেও বিকাশ নম্বরে টাকা নেয়া হয়।

ভুয়া ঠিকানা প্রদান করে প্রতারকরা সেভেন বাংলার একটি প্যাড বানিয়ে হাতের লেখা একটি নিয়োগপত্র পাঠিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয় বলে জানান তিনি।

আর নিয়োগপত্রে সেভেন বাংলা টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরিফুল হক আরিফ স্বাক্ষর করে নিয়োগপত্রটি ইস্যু করা হয়। সোহেল জানায়, তাদের মতো আরও অনেকের কাছে চক্রটি অর্থ হাতিয়ে নেয়।

এভাবে টেকনাফ উপজেলার জাফর আলম নামের এক যুবকের কাছ থেকেও বিভিন্ন কিস্তিতে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। কিন্তু টাকা নেয়ার পর আর মোবাইল ধওে না এই প্রতারক আরিফ। একই ভাবে প্রতিনিধি দেয়ার নামে উখিয়া উপজেলা একরাম নামের এক যুবকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেয় ওই আরিফের ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে। এখন তার মোবাইল ফোন নাম্বারটি ব্লেক লিস্টে দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সেভেন বাংলা নামে এধরনের কোন টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত নয়। পরীক্ষামুলক সম্প্রচারও হয়নি। সেভেন বাংলা টেলিভিশন কোম্পানী লিমিটেড নাম দিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরিফুল হক আরিফ নামের প্রতারক যুবক ৪৭/২ মান্নান টাওয়ার, টয়েনবী সার্কুলার রোড মতিঝিল ঢাকা-১০০০ এবং ১৩/এ,৮তলা,বাংলা মোটর ঢাকা-১০০০ এর ঠিকানা ব্যবহার করে চরমভাবে প্রতারণা করে আসছে।

আরো জানাগেছে, জেলা ও উপজেলায় রিপোর্ট নিয়োগের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া আরীফ চক্রের কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইলে প্রতারিত লোকজনকে উল্টো চাঁদাদাবীর মামলা দিয়ে

গ্রেফতারের হুমকি দেয়। কোন কোন সময় কিসের টাকা, যা নিয়েছি তা ফেরত দিয়েছি বলে উল্টো শাসিয়ে দেয়। এমনকি ওই প্রতারক চক্রের ব্যবহৃত মোবাইল রিসিভ না করে উল্টো হুমকি ও অশালিন ভাষায় এসএমএস দিয়ে নাজেহাল করা হয়।

এই প্রতারক আরিফের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সিলেটের তারেক আহম্মদ। তার কাছ থেকেও প্রতিনিধি নিয়োগের নামে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আর মোবাইল ধরেন না। উল্টো খারাপ ভাষা বিভিন্ন উল্টা-পাল্টা কথা লিখে এসএমএস দেন এবং চাঁদা দাবী করছি বলে হুমকি দেন। চট্টগ্রাম শহরেরও একাধিক যুবক এই আরিফের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যেকের মোবাইলে এই আরিফের বিভিন্ন অডিও এবং এসএমএস রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতারিত ব্যক্তিরা।

ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক জানান, ভুঁয়া টিভি চ্যানেল সেভেন বাংলার মতো আরো বিভিন্ন নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে রাজধানীতে কয়েকটি চক্র চাকরির নামে প্রতারণা করে আসছে। চাকরির নামে প্রতারণা করায় সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ রকম একটি প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়।

এব্যাপারে কথিত সেভেন বাংলা টেলিভিশনের এমডি দাবীদার আরীফুল হক আরিফের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সেল ফোন (নং-০১৬১৩১৪০৭৭৭ ও ০১৭৭৭২০২৬২৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন রিপোর্টারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্ব-স্ব ব্যক্তিকে টাকা ফেরত দেয়া হয় বলে দাবী করেন।

তবে কখন কিভাবে প্রতারিত লোকজনের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে এধরনের কোন প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।