ভাইকে বাঁচাতে বাহরাইন থেকে তুরস্কে ছুটে গেছেন সামেত

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

‘আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে’- কথাটি সামেত ইলমাজের বেলায় অনেকটা সত্যি। তিনি তুরস্কের বাসিন্দা। পরিবার সেখানে থাকলেও তিনি বাহরাইনে বসবাস করেন। কিন্তু তার জন্মভূমিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানায় ছুটে এসেছেন। কারণ তার বিশ্বাস ছোট ভাই ইসমাইল ধ্বংসস্তুপের ভেতর বেঁচে আছেন! তাকে উদ্ধার করতে এসেছেন তিনি।

২৬ বছর বয়সী ইসমাইল একটি সুপার মার্কেটের ক্যাশিয়ার ছিলেন। পরিবারের সাথে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী হাতেই প্রদেশে বসবাস করতেন। তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে তার বোন জামাইকে ধসে যাওয়া বাড়ির ভেতর থেকে টেনে তোলা হয়েছে ঘটনার পরদিনই। কিন্তু ইসমাইল নিখোঁজ আছেন।

সামেত বিবিসি’কে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছোট ভাইটির কথা খুব মনে পড়ছে। আমি বাহরাইন থেকে তুরস্কে ছুটে এসেছি শুধু তাকে খোঁজার জন্য।’

ছোট ভাই ইসমাইল খুব লাজুক কিন্তু বুদ্ধিমান! প্রিয় ভাই বেঁচে আছে- এই খবর শোনার জন্য তিনি অস্থির হয়ে আছেন। কিন্তু তাকে খুঁজে পেতে ‘কারো সাহায্য পাচ্ছেন না’ তিনি।

বাহরাইন থেকে তুরস্কে পৌঁছানোর পর সামেত ইস্তাম্বুল থেকে আদানায় যেতে একটি ফ্লাইটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু পাননি। পরে ঘণ্টাব্যাপী গাড়ি চালিয়ে হাতেই প্রদেশে পৌঁছেছেন।

রাতে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সামেত হোয়াটসঅ্যাপে বলেন, ‘এখানে অনেক ঠাণ্ডা! জীবনযাত্রা খুব কঠিন।’

হাতেই পৌঁছালেও থাকার কোনো জায়গা পাননি সামেত। কারণ ভূমিকম্পে সব ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তিনি আগুন জ্বালিয়ে রাত পার করেছেন।

এদিকে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে।

মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন আইলিন পুলাত। আদিয়ামান থেকে হাজার কিলোমিটার দুরে মুগলাতে থাকেন এই শিক্ষার্থী। মা-বাবাসহ পরিবারের অনেক সদস্যই নিখোঁজ। তাই তাদের খুঁজতে চার ঘণ্টার বাস যাত্রা, দুই ঘণ্টা ফ্লাইটে এবং দুই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। তার এই কষ্ট সার্থক হয়েছে। কারণ তিনি সেখানে গিয়ে তার মা-বাবা এবং তার ভাই-বোনদের খুঁজে পেয়েছেন। তবে পরিবারের অন্য ২০ সদস্য মারা গেছে।

তিনি বলেন, যখন পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে দেখতে পেলাম, মনে শান্তির বাতাস বয়ে গেল! অথচ যাওয়ার আগে মা-বাবা, ভাই-বোনদের খুঁজে পাবো ভাবিনি। তারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই পায়জামা পড়ে ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা শূন্য হাতে ফিরেছে। এবং ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছিল।

‘তবে অনেকে ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে ছিলেন। প্রিয়জনের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু উদ্ধার করতে পারছিলেন না। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।’

সূত্র : বিবিসি

বিডিসংবাদ/এএইচএস