লামায় রাবার শিল্পে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হুমকির মুখে!

রাবার বাগানে প্রতি বছর প্রায় ১০০/১২০ টন সাদা সোনা নামে খ্যাত কাঁচা রাবার উৎপাদন করে দেশে রাবারের চাহিদা পূরণে লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিমিটেড সহায়ক ভুমিকা রাখছে। একই সাথে উৎপাদিত রাবার হতে আর্থিক যোগানে সরকারী রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আসছিল।

কক্সবাজার প্রতিনিধি
রাবার গাছের পাশাপাশি সৃজিত ফলদ ও বনজ গাছ কেটে সাবাড়ের ঘটনা ঘটছে। অনেকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিনিয়োগ থেকে মুখফিরিয়ে নেয়ার উপক্রম হয়েছে। লামা উপজেলার সরই ও ডলুছড়ি মৌজায় ৬৪ টি রাবার প্লটের ১৬’শ একর জমিতে অন্তত পক্ষে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। রাবার বাগানের জমি দখল, ভাংচুর, প্রকল্প মালিক ও শ্রমিকদের উপর অব্যাহত হুমকির কারণে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার রয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা ও দখলবাজ পাহাড়ি চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছে বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে,  ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারী নীতিমালা অনুসারে ৩০১ সরই ও ৩০৩ ডলুছড়ি মৌজায় ২৫ একর করে ৬৪ ব্যক্তি মালিকানায় ১৬’শ একর জমি লীজ নিয়ে সম্বন্বিত রাবার চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গড়ে তুলেন। লীজকৃত জমিতে রাবার বাগানের পাশাপাশি ফলদ আম, জলপাই, লিচু, জাম্বুরা ও বনজ গাছ সৃজন করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে রাবার ও ফলজ বাগানে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। রাবার বাগানে প্রতি বছর প্রায় ১০০/১২০ টন সাদা সোনা নামে খ্যাত কাঁচা রাবার উৎপাদন করে দেশে রাবারের চাহিদা পূরণে লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিমিটেড সহায়ক ভুমিকা রাখছে। একই সাথে উৎপাদিত রাবার হতে আর্থিক যোগানে সরকারী রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আসছিল।

অভিযোগে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে ঢেঁকিছড়া ও আশপাশের কয়েকজন উপজাতি ( ভাসমান ত্রিপুরা ও মুরুং) রাবার হোল্ডিং নং ৬৯, দাগ নং ১০৫৫/৪ ও রাবার হোল্ডিং নং ৯২, দাগ নং ১০৫৫/১৫ এর একাধিক অংশ বার বার জবর দখলের পায়তারা চালায়। ডলুছড়ি মৌজায় প্রায় সাড়ে ৫’শ আমের চারাগাছ কেটে ২০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি করে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছে।

লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রির লিঃ ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) জহিরুল ইসলাম বলেন, পুলু ঝিরি আগা রাবার হোল্ডিং নং ৬৯, দাগ নং ১০৫৫/৪ পয়েন্টে ৯/১০টি ত্রিপুরা ও মুরুং পরিবার টিন দিয়ে নতুন ঘর বেধেঁছে। একইভাবে রাবার হোল্ডিং নং ৯২, দাগ নং ১০৫৫/১৫ এর কিছু অংশে ঢেঁকিছড়ার কয়েকজন উপজাতি নতুন করে ঘর তৈরি করে অবৈধভাবে জমি দখল করতে চাচ্ছে। রাবার বাগান মালিক ও শ্রমিকদের প্রাণনাশ সহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি অব্যাহত রাখে। এব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে আমরা ৬ মাস আগে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। পাশাপাশি অনুলিপি বোয়াং সার্কেল, সেনা ক্যাম্প, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায়ও লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছি।

তিনি আরো বলেন, সরই ও ডলুছড়ি মৌজায় ৬৪ টি রাবার প্লটের ১৬’শ একর জমিতে অন্তত ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। রাবার বাগানের জমি দখল, প্রকল্প মালিক ও শ্রমিকদের অব্যাহত হুমকির কারণে আমরা বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে আছি এবং উপজাতিদের এধরনের সন্ত্রাসমুলক কর্মকান্ডে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে।

সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ বাগান সৃজন করে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ অব্যাহত রেখেছে। কখনও ভাসমান ত্রিপুরা ও মুরুং উপজাতি এখানে ছিলনা।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, ত্রিপুরা ও মুরুং সম্প্রদায় কখনও একসাথে বসবাস করেনা। এখানে তারা যৌথভাবে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজর ক্ষয়ক্ষতি ও জমি জবর দখল করে নতুন পাড়া সৃষ্টি পায়তারা করছে। ডলুছড়ি মৌজার নতুন পাড়া, ঢেঁকিছড়া ও নোয়া পাড়া আমাদের বাগান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

সরেজমিনে জানা যায়, ৩০৩ ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান যোহন ত্রিপুরার ইন্দনে তার সহযোগী কাইংপ্রো ¤্রাে সহ অন্যান্যরা লীজ প্রাপ্ত জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে চাচ্ছে। উল্লেখিত বারাব বাগানগুলো খাজনা চলতি ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিশোধ রয়েছে এবং হেডম্যান যোহন ত্রিপুরাই রশিদ মুলে আদায় করেন।

আরো জানা যায়, সর্বশেষ ৪ মার্চ চম্পাতলি আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগের বিষয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে মৌজা হেডম্যান ও উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে। বৈঠকে অবৈধ দখলে চেষ্টাকারীরা কোন কাগজপত্র দাখিল করতে পারেনি। লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ জমির দলিলপত্র পর্যালোচনা করা হয় এবং অবৈধভাবে দখলের চেষ্টাকারীদের অবৈধ অনুপ্রবেশে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু তারা এসব নির্দেশ না মেনে লীজপ্রাপ্ত জমিতে অবৈধ জবর-দখল সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে।
অবৈধভাবে জবর দখলের চেষ্টাকারি কাদর মুরুং, কামলাই মুরুং ও পিতর ত্রিপুরা জানায়, ৩/৪ মাস আগে তারা অন্য পাড়া থেকে এই স্থানে এসেছে। এই পাড়ার নাম দিয়েছে নোয়া পাড়া। এখানে বসবাসরতরা পূর্বে গজালিয়া ইউনিয়নের আকিরাম পাড়া, টংকবতী, ঢেঁকিছড়া নতুন ও পুরাতন পাড়া, চিউর ছড়া পাড়ায় বাস করত। তাদের দুই স্থানেই ঘর আছে বলে জানায় তারা।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, আমি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। লামা কাননগো ঘটনাস্থল তদন্ত করেন।