আর আন্দোলন নয়, এবার সমঝোতা করতে চায় বিএনপি!

নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় বিএনপি! তারা আন্দোলন করে দাবি আদায়ের বিষয়টি এখনো জোর দিয়ে ভাবছে না বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে দেশে ফেরার পর তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা দিবেন তার শেষ কথাই হবে সমঝোতা।

এই রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা ইত্তেফাককে জানান, আমরা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকব না। কয়েকটি প্রস্তাব দেব। তবে সহায়ক সরকারের দুই ধরনের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। কাঠামোগুলোর মূলভিত্তি হচ্ছে- ‘আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা’। বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিবেন। বিএনপি অশান্তি চায়না। আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান চায়। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নামলে অশান্তি-সহিংসতা হবে। যা দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। সমঝোতার প্রশ্নে দেশ-বিদেশের সকলেই বিএনপির পাশে থাকবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের বড় ধরনের আন্দোলনে ব্যর্থতার ফলে আগামী আন্দোলনে সফলতা আসবে সেই ভরসা নেই। মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের রাজপথে নামানোটাও কঠিন। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন-সংগ্রামে নামলে শক্তিক্ষয় হবে। নেতাকর্মীরা মামলা-গ্রেফতারে ঘর ছাড়া হবে। ভোটের প্রচারণায় হতোদ্যম হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, অতীতের মতো আন্দোলন ব্যর্থ হলে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে; যার পরিণতি ভোগ করতে হবে অনেক বছর ধরে। তবে বিএনপির কতিপয় বুদ্ধিজীবী এবং নেতা          বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে কঠোর আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তাতে রাজি হননি। তিনি মনে করছেন, নির্বাচনের সময় আরো কাছে আসলে সমঝোতায় আসবে সরকার।

প্রসঙ্গত, বেগম জিয়া এ মাসের শেষের দিকে লন্ডন যাবেন। সেখানে চোখের ও পায়ের চিকিত্সা শেষে দেশে ফিরবেন। বেগম জিয়ার ভিসা রয়েছে। তবে তার সফরসঙ্গী একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও একজন পরিচারিকার ভিসা হয়নি এখনো। তাদের ভিসা হলেই চিকিত্সকের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তিনি লন্ডন যাবেন।

বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলটির লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান; যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। এ লক্ষ্য অর্জনে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানা আঙ্গিকে কাজ করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা মনে করছেন, নির্বাচন করতে হলে যেসব উইং সরকারকে ব্যবহার করতে হয়, তারা প্রায় সবাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে। পশ্চিমা দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দাতা সংস্থা, জাতিসংঘ সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে ক্ষমতাসীনরা বাধ্য হতে পারে। এরপরেও যদি সরকার নমণীয় না হয়, কেবল সে ক্ষেত্রেই আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না। তাই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার পর এ বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সহায়ক সরকারের পক্ষে জনমত বাড়াতে বিভাগীয় ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে বেগম জিয়ার উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সমঝোতার মাধ্যমেই তার বরফ গলবে বলে আমরা আশা করছি। সবকিছুরই শেষের দিকে ভালো কিছু আসে। আমরা আশাবাদী যে বরফ গলবে। শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতার রাস্তা বের হবে। তবে এই সংকট থেকে উত্তরণ না ঘটলে এর সকল দায় ক্ষমতাসীনদের ওপর বর্তাবে।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, বিএনপি বিরোধী দল হলেও সংসদে নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে বারবার সংলাপের কথা বলা হয়েছে। এখন আলাপ-আলোচনার পথ ঠিক করতে হবে সরকারকে। এদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে নেতারা গোলটেবিল বৈঠক করেছেন। বহুদিন পর্যন্ত তখন আলোচনা চলেছে। এখন কেন হবে না? মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে কারো পক্ষেই সেখানে সুষ্ঠু নিবার্চন করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক সরকার জরুরি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকমাস আগেও এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’-এর প্রস্তাব নিয়ে তার দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীকেই এই (সহায়ক সরকার) প্রস্তাব দেব। প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনায় আসতে হবে, অন্যথায় সব দায়ভার তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) বহন করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারকে সমঝোতায় আসতে হবে। দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চায়। সরকার নিশ্চয়ই জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করবেন, মর্যাদা দিবেন। সকলেই চায়, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সে নির্বাচনের জন্য চাই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। এটা সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব।