ফ্রান্স আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত প্যারিসে “শেখ রাসেল দিবস” পালিত

ফ্রান্স ব্যুরোঃ

প্যারিসের একটি অভিজাত রেষ্টুরেন্টে গতকাল রবিবার বিকেল ৬ ঘটিকায় “শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতিক, দূরন্ত প্রানবন্ত নির্ভীক” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের বিপ্লবী ও সংগ্রামী সভাপতি জনাব এম এ কাশেম এর সভাপতিত্বে ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ( ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) জনাব মোস্তফা হাসান কবির পরিচালনায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর কনিষ্ঠ সন্তান শহিদ শেখ রাসেল এর ৫৯ তম জন্মদিন এবং শেখ রাসেল দিবস- ২০২২।

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে কেক কেটে উদযাপন করছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সদস্য বৃন্দ।


এ উপলক্ষে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, শেখ রাসেল সহ সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠান ।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের জন্মদিবস উপলক্ষে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সভাপতি এম এ কাশেম সকলকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হোসেন বকুল, মনজুরুল হাসান চৌধুরী সেলিম, শুব্রত ভট্টাচার্য শুভ, আবু মোর্শেদ পাটোয়ারী , শাহজাহান রহমান ও নুরুল হক ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ওয়াদা শিলু, আলী আহমেদ জুবের,সাইদুর রহমান সাইদ, সাবেক মহিলা সম্পাদিকা শাহনাজ বকুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তরিকুল ইসলাম,শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক রবিউল হাসান,সহ- যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক হাসান সিদ্দিকি, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক বেদের খান, সদস্য কামরুল ইসলাম কাবুল, আলমগীর হোসেন ও মোহাম্মদ মুনির হোসেন সহ আরো অনেকে। আরো উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল আহমেদ, আমিনুর রহমান ফারুক, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি জনাব মাসুদ রানা, প্রদীপ কুমার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন মজুমদার, গনমাধ্যমে কর্মী বাংলা টিভি প্রতিনিধি রাসেল আহমেদ, মারুফ চৌধুরী অমিত। এছাড়া ফ্রান্সে বসবাসকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক সংগঠনের নেতা সহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে বিশেষ বক্তব্য দিচ্ছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সদস্য বৃন্দ।


বক্তারা বক্তব্যে বলেন হেমন্তের প্রথম দিন ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের নির্মাণাধীন বাড়িতে মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্ম। সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মায়ামাখা চপল চাহনির নিষ্পাপ নির্মলতায় খুশির বন্যা বয়ে যায় বাড়িতে।বড় বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং বড় ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালের নয়নের মণি হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে শিশু রাসেল। রাতের ঘুম শেষে, পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশস্ত বুকের ওপর ছোট্ট পাখির মতো শুয়ে শরীরের উষ্ণতা নিত সে। বঙ্গবন্ধুর হৃৎপিণ্ড জুড়ে প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাসে ধমনির স্পন্দনে-তখন স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী স্লোগান প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। সামরিক স্বৈরশাসকের গ্রাস থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, রাজনীতির উত্তাল সাগরে আশার তরণী ভাসিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের তরুণ প্রজন্মের নিউরণজুড়ে তখন মুক্তির স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছিল, ঠিক এরকম একটি সময়ে ছোট্ট রাসেলের মুখেও আধো আধো বুলি ফুটতে শুরু করে।

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে বিশেষ বক্তব্য দিচ্ছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সদস্য বৃন্দ।


একপর্যায়ে, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে গণমানুষের কাছে গিয়ে বোঝাতে থাকেন সোনার বাংলা শ্মশান কেন? বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকসহ আপামর জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি জান্তারা। ৮ মে রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে দীর্ঘমেয়াদের জন্য জেলে রাখে তারা; ঘুম থেকে উঠে আর পিতাকে খুঁজে পায় না ছোট্ট রাসেল সোনা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা সারা দেশের ঝিমিয়ে পড়া মানুষকে জাগিয়ে তুলতে থাকে, অন্যদিকে মায়ের আঁচল ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা শুরু করে প্রাণচঞ্চল রাসেল। অস্থির প্রজাপতির মতো এ ঘর-ও ঘর ছুটে বেড়াতে শুরু করে সে। বড় বোন শেখ হাসিনা ততদিনে ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি এবং ছাত্রলীগ নেত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কিন্তু ছোট্ট রাসেল কী আর অত কিছু বোঝে। রাসেলের কাছে তিনি শুধুই হাসু আপা। তাই বড় আপার লম্বা দোদুল বেণি ধরে শিশু রাসেল মাঝে মধ্যেই খেলায় মেতে ওঠে।

শিশু রাসেলের বয়স তখন দেড় বছর। পরিবারের সবার সঙ্গে জেলবন্দি পিতাকে দেখতে সেই ছোট থেকেই কারাগারে যেত রাসেল। অবুঝ রাসেল পিতাকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওম নিত, জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাইত। ছোট আপা রেহানার চিঠি পকেটে করে নিয়ে জেলগেটে বাবাকে দিত; বাবাকে রেখে আর আসতে চাইত না। অবশেষে রাসেলকে বোঝানো হয়েছিল যে, জেলটাই তার বাবার বাড়ি। অবশেষে পিতাকে রেখে ফেরার সময় কখনো মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, আবার কখনো মলিন মুখে শেখ হাসিনার কোলে উঠত।

ফ্রান্স আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত প্যারিসে "শেখ রাসেল দিবস" পালিত

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে বিশেষ বক্তব্য দিচ্ছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সদস্য বৃন্দ।

পিতার অবর্তমানে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত রাসেল নিজের আম্মাকেই আব্বা বলে ডাকতে শুরু করেছিল। কী নিদারুণ কষ্টের শৈশব: বঙ্গবন্ধু তার কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে শিশু রাসেলের স্মৃতি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

এরই মধ্যে ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গোপন বিচার শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর। সেনানিবাসে নিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়; চাইলেও আর পরিবারের সঙ্গে তার দেখা হতো না। অস্থির রাসেল বাবাকে একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠত। প্রতিদিন রাতে বাবার গল্প শুনতে শুনতে মলিন মনে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ত। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি জান্তারা মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুকে। পিতার প্রত্যাবর্তনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ছোট্ট রাসেল। নির্ভীকচিত্তে দুরন্ত গতিতে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে ধানমণ্ডির ছায়াঘেরা সড়কে, চঞ্চল প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে থাকে বাড়ির আনাচে-কানাচে। ১৯৭১ সালে, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি জান্তাদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে আপামর বাঙালি। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর, ১৭ তারিখ মুক্ত হয় বঙ্গবন্ধুর পরিবার।

ঢাকার রাজপথের জয় বাংলা স্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়ে বেরিয়ে পড়ে শিশু রাসেল।দেশে ফিরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণের কাজে মন দেন বঙ্গবন্ধু। জীবনের সাত বছর পেরিয়ে, এই প্রথম পরিবারের সবাইকে কাছে পেল রাসেল। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সৌজন্যে বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও করমর্দনের সুযোগ হয় রাসেলের। শিশু রাসেলের আত্মবিশ্বাসী বাচনভঙ্গি, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি ও নির্মল অভিব্যক্তি মুগ্ধ করে তাদের। রাসেলের প্রতিটি নির্ভীক পদচারণায় ফুটে উঠত বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি।মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির বিষাক্ত ষড়যন্ত্রের ছোবলে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে- এই সম্ভাবনাময় দুরন্ত শিশুমন নীল হয়ে যায়। রাতের শিউলি ভোরের বকুল ঝরে পড়ার আগেই, ঘাতকের বুলেটে রক্তের সাগরে ডুবে যায় সবার প্রিয় পাখিটি। রাসেলের নির্মম মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিশ্বমানবতা; কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রকৃতি।অনেক সম্ভাবনাময় যে শিশুটি অকালে হারিয়ে গেল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাণশক্তি যেন ছড়িয়ে পড়ল এ দেশের প্রতিটি শিশুর মাঝে। একেকটি রক্তিম প্রভাত যেমন জেগে ওঠে ঝাঁক ঝাঁক বিহঙ্গ-কূজনে, তেমনি প্রতিটি বাঙালি শিশুর দামাল দুরন্তপনায় বেঁচে আছে শিশু রাসেল। এদেশের সব শিশুই বেড়ে উঠুক নির্মল চিত্তে, নিরাপদ পরিবেশে; বিকশিত শৈশব শেষে প্রতিটি শিশুই পরিণত হোক একেকজন দেশপ্রমিক নাগরিক হিসাবে।

ফ্রান্স আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত প্যারিসে "শেখ রাসেল দিবস" পালিত
শহীদ শেখ রাসেলের আত্নার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সদস্য বৃন্দ।


অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ শেখ রাসেলসহ তার পরিবারের শহিদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিশ্বমানবতার মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সালেহ্ আহমেদ চৌধুরী।


অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব এম এ কাশেম ফ্রান্স আওয়ামী লীগ কে সুসংগঠিত করা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করার আহ্বান এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

বিডিসংবাদ/এএইচএস