অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হবে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা

পুরনো ঢাকা দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানি হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এই লক্ষ্যে দ্রুত শুনানির জন্য মামলার নথিতে অনুমতি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। অনুমোদনের পরেই তা বিচারপতি মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্টার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ সাব্বির ফয়েজ ইত্তেফাককে বলেন, প্রধান বিচারপতির অনুমোদনের পরেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার পেপার বুক প্রস্তুতের পর দ্রুত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে নথি পাঠানো হয়েছিল। তিনি ওই নথিতে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন দ্রুত হাইকোর্টে শুনানি হবে।

এর আগে পুরনো ঢাকার বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেয়া এই রায়ে একইসঙ্গে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া বেআইনি সমাবেশের আরেকটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই ১৩ জনকে আরো ছয় মাস করে কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আট আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে দুজন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১১ জন পলাতক রয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ আসামির প্রায় সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রফিকুল ইসলাম ওরফে চাপাতি শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিয়া টিপু, রাজন তালুকদার (পলাতক) ও মীর মো. নূরে আলম লিমন (পলাতক)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এএইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ১১ আসামি হলেন খন্দকার ইউনুছ আলী, তারিক বিন জোহর ওরফে তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের দিন থেকে তাদের সাজা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে দিন-দুপুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে পুলিশ, সাংবাদিক ও শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়। ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ড গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে গণমাধ্যম তখন প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। এ নিয়ে ব্যাপক জনমত তৈরি হলে ঘটনার কিছুকাল পরে কয়েকজন আসামিকে আটক করে প্রশাসন। এর ধারাবাহিকতায় ঘটনার এক বছর ৯ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারের রায় ঘোষণা করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪।