কেএন৯৫ মাস্ক বাজারে আনল জেএমআই

অর্থ ও বাণিজ্য:

করেনাভাইরাস প্রতিরোধী কেএন৯৫ মাস্ক বাজারে নিয়ে এসেছে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই। তাদের দাবি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মাস্কটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং লিমিটেড এ মাস্ক উৎপাদন করছে।

সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ মাস্ক বাজারজাতের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, কেএন৯৫ মাস্কের কথা এতদিন শোনা গেলেও, এখন বিশ্বমানের কেএন৯৫ মাস্ক আমাদের হাতের নাগালে। কেএন৯৫ মাস্ক বাজারে আনার মাধ্যমে দেশে একটি ইতিহাস তৈরি করেছে জেএমআই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা মেনে করোনা প্রতিরোধ করায় ভাইরাস মোকাবিলায় এখন বিশ্বে শীর্ষ স্থানে থেকে অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

চীনের উহানে যখন প্রথম কোভিড মহামারি শুরু হয়, তখন সেখানে সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা দেয়ায় জেএমআই গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা আগে খাদ্যশস্য আমদানি করতাম, এখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমদানি করতে হয় না। আমরা সব দিকেই এগিয়ে চলছি। আর এখন আমরা ওষুধও রফতানি করি যেটা কোনদিনও কল্পনা করতে পারতাম না। বর্তমানে বাংলাদেশ ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শিঘ্রই আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে যারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে জেএমআই অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।

কেএন৯৫ মাস্ক প্রসঙ্গে জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই মাস্কটিতে তিন স্তরের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফিল্টার পেপারসহ মোট ৫টি সুরক্ষা স্তর রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ ও বিদেশের পরীক্ষাগারে মাস্কের মান ও যোগ্যতা পরীক্ষা করা হয়েছে। বর্তমানে আমদানি করা চীনা কেএন৯৫ মাস্ক দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকায়। একই মানের মাস্ক ১০০ টাকায় বিক্রি করবে আমাদের প্রতিষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জেএমআই গ্রুপের চেয়ারম্যান জাবেদ ইকবাল পাঠান বলেন, গত বছরের এপ্রিলের পর দেশে যখন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু করেছিল, তখন আন্তর্জাতিক মানের ফেস মাস্কসহ নানা সরঞ্জাম তৈরি করে আমরা সরকারকে সহায়তা দিই। যা ওই দুঃসময়ে দেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীনকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে ১০ লাখ হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করা হয়। যা উৎপাদন করেছে জেএমআই।

প্রসঙ্গত এন৯৫, কেএন৯৫ কিংবা এফএফপিটুর মতো মাস্ক উৎপাদন হয় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে। বাংলাদেশে এসব মাস্ক উৎপাদনের কোনো মানদণ্ড না থাকায় চীনের নীতিমালা মেনে দেশে কেএন৯৫ মানের মাস্ক উৎপাদন করেছে জেএমআই। প্রায় এক বছর গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন এ পণ্য তৈরি করেছে তারা। তবে কোম্পানিটি একে মাস্ক না বলে রেসপিরেটর হিসেবে অভিহিত করছে। কোম্পানিটির মাস্কের নাম জেএমআই রেসপিরেটর।

এর আগে গত বছর নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগ ওঠে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অথবা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তার-নার্স এবং অন্যান্যদের সুরক্ষায় এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য জেএমআই গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেএমআই গ্রুপ এন-৯৫ মাস্কের নামে ২০ হাজার ৬১০টি মাস্ক সরবরাহ করে। পরে দেখা যায় ওই মাস্কগুলো প্রকৃতপক্ষে এন-৯৫ মাস্ক নয়। সেগুলো ১০টি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়। পরে ভুলবশত ওই মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।