ট্রাম্পকে সিরীয় শিশুর আবেগঘন চিঠি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন সারা দুনিয়ার মুসলিমদের ওপর ক্ষোভ আর ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিক সেসময়ই তাকে একটি আবেগঘন চিঠি লিখেছে সিরীয় এক শিশু। চিঠিতে ওই শিশু লিখেছে, ‘সিরিয়ার শিশুদের জন্য আপনাকে কিছু করতেই হবে। কারণ তারা আপনার সন্তানদের মতোই। তারাও আপনার মতো শান্তিতে থাকার অধিকার রাখে।’ খবর বিবিসির।

এক খোলা চিঠিতে ট্রাম্পকে এসব কথা লিখে টুইট করে রীতিমত খ্যাতি পেয়ে গেছে সিরিয়ার ছোট্ট মেয়ে বানা আলাবেদ।

গত ডিসেম্বরে আলেপ্পো থেকে যখন আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছিল তখন পরিবারের সঙ্গে বানা আলাবেদকেও উদ্ধার করা হয়। এখন সে তুরস্কে বসবাস করছে।

অবরুদ্ধ আলেপ্পো থেকে বানা নিয়মিত টুইট করত। এসময় তার টুইটার অ্যাকাউন্ট বিশ্বজোড়া খ্যাতি পায়। বানার মা ফাতেমা জানিয়েছেন, বানা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথের আগেই এই চিঠিটি লিখেছে।

ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে বানা লিখেছে, প্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমার নাম বানা আলাবেদ এবং আমি সিরিয়ার আলেপ্পোর সাত বছরের এক বালিকা।

আমি গত বছর ডিসেম্বরে অবরুদ্ধ পূর্ব আলেপ্পো থেকে পালিয়ে আসার আগ পর্যন্ত সিরিয়াতেই থাকতাম। আমি সিরিয়ার সেইসব শিশুদের অংশ যারা সিরীয় যুদ্ধের ফল ভোগ করছে। কিন্তু এখন তুরস্কের নতুন এক বাড়িতে আমি শান্তিতে আছি।

আলেপ্পোতে থাকার সময় আমি স্কুলে পরতাম, কিন্তু সেটা বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার কিছু বন্ধু সেখানে মারা গেছে। এজন্য আমার খুব দুঃখ লাগে। তারা আমার সঙ্গে এখানে থাকলে আমরা একসঙ্গে খেলতে পারতাম।

আমি আলেপ্পোতে থাকতে খেলতে পারতাম না। সেটা ছিল এক মৃত্যুপুরী। এখন তুরস্কে আমি বাইরে যেতে পারি এবং মজা করতে পারি।

আমি স্কুলেও যেতে পারব। তবে আমি এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। একারণেই সবার জন্য শান্তি গুরুত্বপূর্ণ, আপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

যাই হোক, সিরিয়ার লাখ লাখ শিশু এখনো আমার মত শান্তিতে নেই। তারা সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধের কুফল ভোগ করছে। তারা ভোগান্তিতে আছে বড় মানুষদের কারণে।

আমি জানি আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন, আপনি দয়া করে সিরিয়ার জনগণ ও শিশুদের রক্ষা করুন। কারণ তারা আপনার সন্তানদের মতোই। তারাও আপনার মতো শান্তিতে থাকার অধিকার রাখে।

আপনি যদি প্রতিশ্রুতি দেন আপনি সিরিয়ার শিশুদের জন্য কিছু করবেন, তাহলে ধরে নেন আমি আপনার একজন নতুন বন্ধু। আপনি সিরিয়ার শিশুদের জন্য কী করবেন, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয় বুধবার এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন ট্রাম্প। এর মধ্যে মুসলিম দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি আদেশও রয়েছে।

ওই আদেশ অনুযায়ী মুসলমি দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা শরণার্থী এবং অভিবাসীদের সংখ্যা সীমিত করা হবে। শুধু তাই নয় ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের শরণার্থী এবং অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন। তাদের ভিসার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন ট্রাম্প।

বানার ওই চিঠি সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। বানার এই আবেগঘন চিঠিটি ট্রাম্পের মনে কোনো দাগ ফেলবে কিনা অথবা ট্রাম্প সত্যিই সিরিয়ার জন্য কিছু করবেন কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।