ডাঃ পারভীন আক্তারঃ দেহে মানুষের জীবন সচল রাখতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ থাকতে হবে। শরীরের তাপ তার স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে আমরা বলি জ্বর হয়েছে। জ্বর কোন রোগ নয়, এটা বিভিন্ন রোগের একটা লক্ষণ মাত্র। জ্বর শিশুর অবসাদ, পানি স্বল্পতা ঘটায়। উচ্চ জ্বর বিপদজনক। তাই জ্বর হলে জ্বর কমাতে হবে ও শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বরের কারণে চিকিৎসা করাতে হবে।
শিশুর জ্বরের লক্ষনসমূহ:
শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়া, ঘুমঘুম ভাব, শরীরে খিঁচুনি দেয়া, শিশুর মাথার তালু খুব ফুলে যাওয়া, সারাক্ষণ কান্না করতে থাকা, বমি বা পাতলা পায়খানা করা, খেতে না চাওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে পড়া, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়া, শরীরে দানা দানা দাগ বা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠা, ১২ ঘন্টার মধ্যে কোন প্রস্রাব না হওয়া, ঠিক মত খাচ্ছেনা, শরীরে র্যাশ (লাল হয়ে যাওয়া) ইত্যাদি ।
#জ্বর হলে শিশুর প্রতি আপনার করণীয়ঃ
*বিশ্রাম দিন।
*প্রচুর পানি এবং শরবতের রস খেতে দিন।
*শিশুকে তার স্বাভাবিক খাবার খেতে দিন। তার রুচিত পরিবর্তন হলে খাবার পরিবর্তন করা যেতে পারে। সব সময় খাবারের পুষ্টিগুনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
*শিশুর জ্বরের মারাত্বক উপসর্গ দেখা দেয় এসব ক্ষেত্রে তারাতারি শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যে কারণে জ্বর হয়েছে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।
* শিশুর গায়ে হালকা কাপড় রাখুন কারণ খোলা হাওয়া বাতাস জ্বর কমাতে সাহায্যে করে।
*জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ড্রপ/সিরাপ/ট্যাবলেট/সাপোহিটারি ব্যবহার করা যায়। শিশু বিষেশজ্ঞের পরামর্শ ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর- যতক্ষন জ্বর থাকে প্যারাসিটেমল (নির্দিষ্ট পরিমাণ) দিতে হবে।
*প্যারাসিটামল ব্যবহার সত্ত্বেও জ্বর বাড়তে থাকলে বা ঔষুধ খাওয়ানোর ৪ ঘণ্টার মধ্যে জ্বর কেড়ে কুসুম গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে ও পরে তা নিংড়ে নিয়ে প্রথমে পা, তারপর হাত,বুক,পেট,পিঠ মাফ বারবার মোছাতে হবে। একে বলে টেপিড স্পঞ্জিং(tepid sponging) বা উষ্ণ স্পঞ্জিং । ৩-৪ মিনিট টেপিড স্পঞ্জিং বা উষ্ণ স্পঞ্জিং করালে জ্বর কমে যাবে। তবে কখনই ঠান্ডা পানি বা বরফ পানির স্পঞ্জিং করবেন না।
জ্বর থেকে খিঁচুনি হলে তাৎক্ষনিক করণীয়: জ্বরের সঙ্গে যদি খিঁচুনি হয় তবে মোটেও দেরি না করে শিশুকে জরুরিভিত্তিতে নিকটবর্তী হাসপাতালে বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন। বাসায় রেখে অযথা সময় নষ্ট করলে শিশুর ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে, এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
ডাঃ পারভীন আক্তার
এমবিবিএস (ডিএমসি), ডিসিএইস (ডিইউ),
এমসিপিএস (বিসিপিএস), শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ