আজ পিরোজপুর মুক্ত দিবস : হানাদার বাহিনী গানবোর্ট নিয়ে পলায়ন

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

আজ ৮ ডিসেম্বর, পিরোজপুর মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পিরোজপুর পাকহানাদার, রাজাকার, আলসামস ও আলবদর মুক্ত হয়।
এই দিনে ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল সবুজের বিজয় পতাকা। পিরোজপুরের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের কমান্ডের আওতায়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার ১৮ ঘন্টার মধ্যে পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র-গুলি নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়।
১৯৭১ সালের ৩ মে পিরোজপুরে প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী প্রবেশ করে। বরিশাল থেকে গানবোর্টে চড়ে ৩২ পাঞ্জাব ও ২২ বালুচের ২ প্লাটুন বর্বর সৈন্য শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌ-বন্দর থেকে শহরে প্রবেশের পথে প্রথমেই তারা মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে নারকীয় গণহত্যা। এই দিনেই তারা শতাধিক নিরাপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে হত্যা করে। জ¦ালিয়ে দেয় শহরের ও শহরতলীর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শতশত বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, খাদ্যগুদাম।
স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকজনদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মূল মন্ত্র বুকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে ৫ মে পিরোজপুরের বলেশ^র নদের বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখনকার মহাকুমা প্রশাসক মো. আব্দুর রাজ্জাক, ১ম শ্রেণির মেজিস্ট্রেট সাইফুল বারী মো. মিজানুর রহমান, লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবালের পিতা মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের। এভাবে ৮ ডিসেম্বর পালিয়ে যাওয়ার দিন পর্যন্ত রক্ত পিপাষু বর্বর হায়নারা তদানিন্তন পিরোজপুর মহাকুমার ৯টি থানার ৩০ সহ¯্রাধিক মুক্তিকামী নারী-পুরুষ শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করে।
পিরোজপুর মহাকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ও শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা ওমর ফারুক, ফজলুল হক খোকন, বিধান মন্টু, সেলিম, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১ম স্থান অধিকারকারী গণপতি হালদার, জিয়াউজ্জামান, গৃহবধু ভাগিরথী সাহাসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে পৈশাচিকভাবে বলেশ^র খেয়াঘাটের বধ্যভূমিসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয়।
পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাতে সামছুল হক খানের নেতৃত্বে পাড়েরহাটের দিক থেকে এবং হাবিবুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে আরেকটি শক্তিশালী দল নাজিরপুরের পথ ধরে শহরের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসার খবর পেয়ে দখলদার বাহিনী পিরোজপুর ছেড়ে গানবোর্টে চড়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়। এর আগে স্বরূপকাঠী পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দূর্গে পাকবাহিনী আক্রমন করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যাবার দিন তারা ন্যাশনাল ব্যাংক লুট করে সেখানে গচ্ছিত টাকা এবং স্বর্ণ নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা পিরোজপুর অঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, সম্ভ্রম লুটে নেয় সহস্রাধিক মা-বোনের।
পিরোজপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি মধ্যে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ ভাগিরথী চত্ত¦রে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও র‌্যালি শেষে গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে স্বাধীনতা মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছে এমন ৫ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। এ আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬ টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জলন এর আয়োজন করা হয়েছে। পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন জানিয়েছেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ স্বাধীনতা প্রিয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিডিসংবাদ/এএইচএস