‘নীল নয়না’ রাউধা রাজশাহীতে সমাহিত

রাজশাহীতে চিকিৎসা শাস্ত্র পড়তে এসেছিলেন মালদ্বীপের ‘নীল নয়না’ নাগরিক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘ভোগ’ মডেল রাউধা আথিফ। কিন্তু তার আর দেশে ফেরা হলো না। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তাকে রাজশাহীর মাটিতেই দাফন করা হয়েছে।

শনিবার বাদ জোহর পুলিশের সহযোগিতায় রাউধার পরিবারের সদস্যরা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ কবরস্থানে রাউধার দাফন করে। এ সময় বাবা, মা, ভাই ও বোনসহ রাউধার পরিবারের ১১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানাইজার এনায়েত কবীর মিলন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে রাউধার লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তারা রামেক হাসপাতালের হিমাগার থেকে লাশ গ্রহণ করেন। ভাই হাসান আথিফ ও বোন নাছফা আথিফসহ তার পরিবারের ১১ জন সদস্য, রাউধার সহপাঠী এবং পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তার দাফনকার্যে পরিবারের ১১ সদস্য অংশ নেন। এর আগে জোহরের নামাজের পর কবরস্থান সংলগ্ন ‘রওজাতুস সালেহীন’ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার পরিবারের সদস্য, সহপাঠী, রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের সদস্য ও স্থানীয়রা অংশ নেন।

জানাজার আগে দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর পর্যটন মোটেল থেকে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান শাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদ কবরস্থানে আসেন। এরপর দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িতে করে রাউধার মা, বাবা ও ভাইসহ ৮-৯ জন নিকটাত্বীয়কে কবরস্থানে আনা হয়। জানাজার আগে কবরস্থানের ভেতরের একটি ঘরে রাউধা আথিফকে শেষবারের মতো গোসল করানো হয়। দাফনের সময় রাউধা আথিফের মা আমিনাথ মুহারমিমাথ কবরস্থানের ভেতর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে চলে যান। এর আগে রওজাতুস সালেহীন মসজিদের ভেতর শেষবারের মতো সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যদের রাউধার লাশ দেখানো হয়।

আরএমপির মূখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম বলেন, শুক্রবার দুপুরে রাউধা আথিফের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। শনিবার সকালে তার লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে তার বাবা মোহাম্মাদ আথিফ জানায় তাদের পরিবারের সদস্যরা রাউধাকে রাজশাহীতে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে অনুযায়ী অনুমতির জন্য তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাউধার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ (আইবিএমসি) হাসপাতালের হোস্টেল থেকে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাউধার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, তার শরীরে আঘাতজনিত কোনো চিহ্ন নেই। রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফও পেশায় চিকিৎসক।

২০১৬ সালের অক্টোবরে বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সংখ্যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘বৈচিত্রের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের ‘নীল নয়না’ মডেল রাউধা। উঠতি মডেল হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সী রাউধার রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

রাউধা আত্মহত্যা করতে পারে না বলে দাবি করেছেন তার বাবা-মা। রাউধার মৃত্যুর ঘটনা আরএমপি নানাভাবে তদন্ত করছে। রাউধার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট ও ল্যাপটপ জব্দও করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ আইফোনের লক এখনো খুলতে পারেনি। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

নগরীর শাহ্ মখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রাউধা আত্মহত্যা করেছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে এর পেছনের সম্ভাব্য সব কারণ অনুসন্ধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষার্থীদের কোনো আচরণ তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিল কি না, সেটিও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি তার সঙ্গে কারো সম্পর্ক ছিল কি না, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’